শবে বরাত I shab-e-barat

Muhammad Jamal Uddin
0





শবে বরাত সম্পর্কে আরো বিস্তারিত


শবে বরাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলোর মধ্যে একটি। এটি মূলত আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত (ক্ষমা) এবং নাজাত (মুক্তি) লাভের রাত হিসেবে পরিচিত। মুসলিম উম্মাহর অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁদের গুনাহ ক্ষমা করেন।



১. শবে বরাতের ইতিহাস ও বর্ণনা

শবে বরাত সম্পর্কে সরাসরি কোরআনে কোনো আলোচনা নেই, তবে হাদিসের মাধ্যমে এর গুরুত্ব বোঝা যায়। বিভিন্ন বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের ১৫তম রাতকে ইবাদতের জন্য গুরুত্ব দিতেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বেশি বেশি দোয়া করতেন।

কিছু ইসলামী স্কলার মনে করেন যে, এই রাতেই উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। অনেকে বলেন, এই রাতেই এক বছরের ভাগ্যলিপি নির্ধারণ করা হয়। যদিও এটি নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে অধিকাংশ মুসলিম এই রাতকে ফজিলতপূর্ণ মনে করেন।



২. শবে বরাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

১. গুনাহ মাফের রাত


হাদিসে বলা হয়েছে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া করেন এবং তাঁদের গুনাহ মাফ করে দেন, যদি তাঁরা শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকে।



২. রিজিক ও তাকদির নির্ধারণের রাত


অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ মনে করেন, এই রাতে মানুষের ভাগ্য ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয়। তবে, এটি কোরআনের "লাইলাতুল কদর" সংক্রান্ত আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট কিনা, সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।



৩. রাসুল (সা.)-এর আমল


রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন এবং শবে বরাতে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন বলে কিছু হাদিসে উল্লেখ আছে।





৩. শবে বরাতের আমল ও করণীয় ইবাদত

✔ করণীয় ইবাদত:

✅ নফল নামাজ:


শবে বরাতে নফল নামাজ আদায়ের ফজিলত রয়েছে। কেউ চাইলে ২, ৪, ৬, ৮ বা ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।

প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যেকোনো সূরা পড়া যেতে পারে।



✅ কুরআন তিলাওয়াত:


এই রাতে বেশি বেশি কুরআন পড়া এবং তার অর্থ ও ব্যাখ্যা বোঝার চেষ্টা করা উচিত।



✅ দোয়া ও ইস্তিগফার:


আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, নিজের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং বেশি বেশি দোয়া করা উত্তম।

রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ অনুযায়ী, এ রাতে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন।



✅ রোজা রাখা:


শবে বরাতের পরের দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব (উত্তম), যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়।



✅ কবর জিয়ারত:


রাসুল (সা.) এই রাতে কবর জিয়ারত করেছেন বলে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে, নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বা আমল বাধ্যতামূলক নয়।




#হালুয়া তো হারাম কিছু না,বরং হালুয়া রুটি সুন্নাহ সম্মত খাবার৷ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার অত্যন্ত পছন্দের খাবার।

হাদীস শরীফে আছে, হযরত হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি হালুয়া অত্যন্ত পছন্দ করতেন। সাইয়্যিদাতুনা ত্বহিরা তইয়্যিবা উম্মুল মুমিনীন হযরত সিদ্দিকাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত হয়:

‎ حَدَّثَنِي  إِسْحَاقُ  بْنُ  إِبْرَاهِيمَ  الْحَنْظَلِيُّ،  عَنْ  أَبِي  أُسَامَةَ،  عَنْ  هِشَامٍ،  قَالَ  أَخْبَرَنِي  أَبِي،  عَنْ  عَائِشَةَ  ـ  رضى  الله  عنها  ـ  قَالَتْ  كَانَ  رَسُولُ  اللَّهِ  صلى  الله  عليه  وسلم  يُحِبُّ   الْحَلْوَاءَ   وَالْعَسَلَ‏.‏

অর্থ: তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ রসূলুল্লাহ্‌ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি হালুয়া ও মধু খেতে ভালোবাসতেন, পছন্দ করতেন।

— সহীহ বুখারী, হাদীস শরীফ নং ৫৪৩১

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু উনার থেকে রুটি খাওয়া সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে—

عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وَسَلَّمَ يَبِيْتُ اللَّيَالِي الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِيًا وَأَهْلُهٗ لَا يَجِدُوْنَ الْعَشَاءَ وَكَانَ أَكْثَرُ خُبْزِهِمْ خُبْزَ الشَّعِيْرِ

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন— নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ও উনার  হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা একাধারে কয়েক রাত না খেয়ে অর্থাৎ খাবার গ্রহণ না করে কাটিয়ে দিতেন। উনারা রাতের খাবার পরিহার করতেন। আর বেশিরভাগ সময় যবের রুটিই ছিল উনাদের মহাসম্মানিত খাদ্য মুবারক।

—তিরমিযী শরীফ : কিতাবুয যুহুদ : হাদী শরীফ নং ২৩৬০

এক হাদীস শরীফে পেলাম হালুয়ার কথা, আরেক হাদীস শরীফে রুটির কথা৷ তো যা নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ও উনার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা গ্রহণ করতেন, পছন্দ করতেন— তা কীভাবে বেদআত হয়? আর কোনো হালাল খাদ্যে বেদআতের কী আছে? বলদমার্কা উসুলে তো দুনিয়ার সবকিছুকেই বেদআত বানায় দেওয়া যাবে।

অর্থাৎ কোনো হালাল খাদ্য বিশেষ কোনো দিনে গ্রহণ করা ও আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো, বিতরণ করা  কখনোই বেদআত নাজায়েজ হতে পারে না।

বুখারী শরীফে আমভাবে খাদ্য খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। সর্বোত্তম কাজ কোনটির প্রশ্নে আল্লাহ পাকের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি মানুষকে খাদ্য খাওয়ানোর কথা বলছেন৷

عن عبدالله بن عمرو رضي الله تعالی عنه، أن رجلا سأل رسول الله صلی الله علیه وسلم: أي الاسلام خیر؟ قال: تطعم الطعام، وتقرأ السلام علی من عرفت ومن لم تعرف.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: একদা এক ব্যক্তি রসূলে খোদা হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে জিগ্যেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইসলামে  সর্বোত্তম কাজ কোনটি? হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বললেন, মানুষকে খাবার প্রদান করা এবং পরিচিত অপরিচিত সকলকে সালাম দেওয়া।

—সহীহ বুখারী শরীফ, হাদীস নং ২৮; সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ১৬৯

মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো, প্রদান করা, বিতরন করাকে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। ইসলামের সর্বোত্তম কাজের অন্তর্ভুক্ত করেছেন — এই কাজ যেকোনো বৈধ  উপলক্ষে করা যাবে। তা বেদআত হবে কেন?

  এই খাদ্য বিতরণ সম্পর্কে আরেকখানা হাদীস শরীফে এসেছে এভাবে —

حدثنا عن نافع، أنّ عبدالله بن عمر رضي الله تعالي عنه، کان یقول: إن رسول الله صلی الله علیه وسلم، قال: أفشوا السلام، وأطعموا الطعام، وکونوا إخوانا، کما أمرکم الله عز وجل.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলতেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন—  আপনারা সালামকালামের প্রসার করেন, খাদ্য প্রদান/বিতরন করেন এবং পরস্পর  ভাই  হয়ে যান।  যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ করেছেন।

— সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩২৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৬৪৫০

এখানে খাদ্য প্রদান /বিতরন করাকে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ গুরুত্বারূপ করেছেন। এবং পরস্পর ভাই হয়ে যাওয়ার পিছনের কারণও এটাই৷

শবেবরাতে মহান আল্লাহ পাক মুশরিক ও সম্পর্ক ছিন্নকারী, হিংসুকদের দোয়া কবুল করেন না৷ আর সম্পর্ক রক্ষা করার উত্তম মাধ্যম হলো, খাদ্য বিতরণ করা খাদ্য খাওয়ানো পরস্পর একসাথে জামাতে নামাজ পড়া, বসা আলোচনা করা৷












৫. শবে বরাত বনাম লাইলাতুল কদর

অনেক মানুষ মনে করেন, শবে বরাত এবং লাইলাতুল কদর একই রকমের ফজিলতপূর্ণ রাত। কিন্তু বাস্তবে এ দুটি রাতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে:



৬. শবে বরাতের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত?

১. সঠিক আকিদা রাখা:


শবে বরাতের গুরুত্ব রয়েছে, তবে এটিকে অতিরঞ্জিত করা উচিত নয়।


ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ গ্রহণ:


শবে বরাত যদি সত্যিই গুনাহ মাফের রাত হয়, তবে এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।




শবে বরাত (আরবি: ليلة البراءة, বাংলা উচ্চারণ: লাইলাতুল বারাআত) ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাতে পালিত হয়। এটি মূলত মুসলিমদের কাছে ক্ষমা, রহমত এবং বরকতের রাত হিসেবে বিবেচিত হয়।



শবে বরাতের অর্থ ও তাৎপর্য

"শব" ফার্সি শব্দ, যার অর্থ রাত, এবং "বরাত" অর্থ মুক্তি বা ক্ষমা। অর্থাৎ, শবে বরাত মানে হলো "মুক্তির রাত" বা "ক্ষমার রাত"। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন, রিজিক ও তাকদির নির্ধারণ করেন এবং তাঁর রহমত বর্ষণ করেন।



শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনে সরাসরি কিছু বলা না হলেও, হাদিসে এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। কিছু বিশিষ্ট হাদিস অনুযায়ী—

আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন:


হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত:
"আল্লাহ তাআলা শাবানের ১৫তম রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।"
(ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)



রিজিক ও তাকদির নির্ধারণের রাত:


অনেক ইসলামি পণ্ডিতের মতে, এই রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়, যদিও এ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। তবে, কোরআনের সূরা আদ-দুখানের ৩-৪ আয়াতে বলা হয়েছে—
"নিশ্চয়ই আমি এক বরকতময় রাতে কোরআন নাজিল করেছি। এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়।"





শবে বরাতের আমল ও ইবাদত

শবে বরাতে বিভিন্ন নফল ইবাদত করার কথা বলা হয়েছে, যেমন—


নফল নামাজ: অনেকে একা একা অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করে। তবে, শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ জামাতের আয়োজন করা সুন্নাহ নয়।

কুরআন তিলাওয়াত: সারা রাত জেগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং কুরআন পাঠ করা অনেক ফজিলতপূর্ণ।

দোয়া ও ইস্তিগফার: এ রাতে বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তিগফার করা উচিত।

রোজা রাখা: নবী করিম (সা.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন, বিশেষত ১৫ শাবানের পরদিন (১৬ শাবান) রোজা রাখা সুন্নত নয়, তবে অনেক সাহাবি তা করতেন।

কবর জিয়ারত: হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) শবে বরাতে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়েছিলেন। তবে, বিশেষ আমল বা নিয়ম নির্ধারণ করা বিদআত হতে পারে।




শবে বরাত নিয়ে বিতর্ক

শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস রয়েছে, তবে কিছু ইসলামি স্কলার একে বিশেষ রাত হিসেবে মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, শবে বরাতের রাত সম্পর্কে সহিহ হাদিসের সংখ্যা কম এবং এটি পালন করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ নয়। অন্যদিকে, হানাফি, শাফেয়ি ও কিছু হাদিস বিশারদগণ এই রাতের ফজিলতকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন।



বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে শবে বরাত পালন

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমরা শবে বরাত বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। অনেকে এ রাতে মসজিদে জড়ো হয়ে ইবাদত করে এবং আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে। মধ্যপ্রাচ্যে শবে বরাতের প্রচলন তুলনামূলকভাবে কম।



শবে বরাত উপলক্ষে করণীয় ও বর্জনীয়

✔ করণীয়:


রাত জেগে ইবাদত করা

বেশি বেশি ইস্তিগফার ও দোয়া করা

কুরআন তিলাওয়াত করা

কবর জিয়ারত করা





শবে বরাত সম্পর্কে আরও গভীর বিশ্লেষণ

শবে বরাত ইসলামের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ রাত হিসেবে পরিচিত। তবে এটি নিয়ে ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ এটিকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, আবার কেউ বলেন এটি আল্লাহর বিশেষ রহমতের রাত হলেও এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো আমল বাধ্যতামূলক নয়। নিচে শবে বরাত সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।



১. শবে বরাতের নাম ও অর্থ

শবে বরাত শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। এর দুটি অংশ—


"শব" অর্থ রাত।

"বরাত" অর্থ মুক্তি, ভাগ্য, বা পরিত্রাণ।



আরবিতে শবে বরাতের সমার্থক শব্দ:


"লাইলাতুল বারাআত" (ليلة البراءة): যার অর্থ হলো "মুক্তির রাত"।

"লাইলাতুর রহমাহ" (ليلة الرحمة): অর্থাৎ "রহমতের রাত"।



এই রাতকে অনেক সময় "লাইলাতুল তাকদীর" (নিয়তি নির্ধারণের রাত) বলা হলেও, লাইলাতুল কদরের মতো এর কোনো কুরআনি দলিল নেই।



২. শবে বরাত সম্পর্কে কুরআনের আলোচনা

শবে বরাত সম্পর্কে কুরআনে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তবে, কিছু ইসলামি পণ্ডিত মনে করেন যে, সুরা আদ-দুখান-এর ৩-৪ আয়াত এই রাতের ব্যাপারে ইঙ্গিত করে—


إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ ۝ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ

"নিশ্চয়ই আমরা এক বরকতময় রাতে কোরআন অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমরা সতর্ককারী। এই রাতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয়।"
(সুরা আদ-দুখান: ৩-৪)



তবে, অধিকাংশ তাফসিরবিদ (যেমন: ইমাম ইবন কাসির) বলেছেন যে, এই আয়াতে লাইলাতুল কদর (রমজানের রাত) বোঝানো হয়েছে, শবে বরাত নয়।



৩. শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসের আলোচনা

শবে বরাত সম্পর্কে কিছু হাদিস পাওয়া যায়, তবে এগুলোর বিশুদ্ধতা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। নিচে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো—

(১) আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করেন:


হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত:

"আল্লাহ তাআলা শাবানের ১৫তম রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।"
(ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, তিরমিজি: ৭৩৯, আহমাদ: ৬৬৩৮)



এই হাদিসটি হাসান (ভালো) বলা হলেও, কিছু মুহাদ্দিস একে দুর্বল বলেছেন।

(২) এই রাতে দোয়া কবুল হয়:


হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত:

"যখন শাবানের ১৫তম রাত আসে, তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং পরদিন রোজা রাখো। কারণ, এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ দুনিয়ার নিকটবর্তী হয়ে বলেন— ‘আছে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেউ রিজিক চাওয়ার? আমি তাকে রিজিক দেব।'’"
(ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪, বায়হাকি: ৩৮৩৫)



এই হাদিসটি কিছু মুহাদ্দিস দুর্বল (দায়েফ) বলেছেন। তবে অনেক ইসলামি স্কলার এটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন।



৪. শবে বরাতের আমল ও করণীয় ইবাদত

শবে বরাতের রাতকে অধিকাংশ ইসলামি পণ্ডিত ইবাদতের রাত বলে মনে করেন, যদিও বিশেষ কোনো ইবাদত বাধ্যতামূলক নয়।

✔ করণীয় আমল:

✅ নফল নামাজ:


অনেকে একা একা অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করেন।

দুই রাকাত, চার রাকাত, আট রাকাত বা ১২ রাকাত পড়া যায়।

প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যেকোনো সূরা পড়া যায়।



✅ কুরআন তিলাওয়াত:


এই রাতে কুরআন পাঠ ও তাফসির বোঝার চেষ্টা করা উচিত।



✅ তাওবা ও ইস্তিগফার:


নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

"আস্তাগফিরুল্লাহ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ..." ইত্যাদি দোয়া পড়া।



✅ রোজা রাখা:


রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন।

১৫ শাবান পরের দিন (১৬ শাবান) রোজা রাখা মুস্তাহাব (উত্তম)।



✅ কবর জিয়ারত:


রাসুল (সা.) এই রাতে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়েছিলেন।










অনেক জায়গায় মসজিদে বিশেষ জামাত হয়, যা নবী (সা.) বা সাহাবারা করেননি।





৬. শবে বরাতের বিতর্ক ও মতপার্থক্য

(ক) যারা শবে বরাতের ফজিলত স্বীকার করেন:

✅ হানাফি, শাফেয়ি, ও কিছু হাদিস বিশারদ শবে বরাতকে ফজিলতপূর্ণ মনে করেন।
✅ শবে বরাতকে রহমতের রাত হিসেবে গণ্য করেন এবং ইবাদত করতে বলেন।

(খ) যারা শবে বরাতের বিরোধিতা করেন:

❌ সালাফি, আহলে হাদিস ও কিছু মুহাদ্দিস শবে বরাতের ফজিলত অস্বীকার করেন।
❌ তাঁরা বলেন, শবে বরাত নিয়ে সহিহ ও শক্তিশালী কোনো হাদিস নেই।



৭. উপসংহার

শবে বরাত ইসলামের রহমত ও মাগফিরাতের রাতগুলোর একটি। যদিও এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবুও এই রাতে ইবাদত করা উত্তম। তবে কুসংস্কার ও বিদআত থেকে দূরে থাকা উচিত।

আমরা যেন এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং গুনাহ মাফের সুযোগ গ্রহণ করতে পারি— এটাই প্রত্যাশা।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!