রাসুলুল্লাহ ﷺ এঁর প্রতি তাজিম। Muhammad sm ki Tazim

Muhammad Jamal Uddin
0

 "হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ প্রতি তাজিম করা, সম্মান করা, আদব বজায় রাখা কুরআন মাজিদের নির্দেশ, যা ফরজ"

------------------------------------------------------------
সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারি

মদিনা শরিফ জিয়ারতে এসেছেন আব্বাসীয় প্রতাপশালী খলিফা আল মনসুর। মসজিদে নববীতে গেলেন। হুজুর রাসুলুল্লাহরﷺ রওজা মুবারক জিয়ারত শেষে, রওজা শরিফের সামনে দাঁড়িয়েই একটু উচ্চস্বরে সাথীদেরকে কিছু করার নির্দেশ দিলেন৷

মসজিদে নববীতে তখন হাদিস ফিকহের দরস দিচ্ছিলেন মদিনা শরিফের ইমাম ও বিখ্যাত মালিকি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম মালিক ইবনে আনাস রাহ.। তিনি খলিফার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, আপনি এখানে উচ্চস্বরে কথা বলছেন কেন? জানেন না প্রিয় নবীজির ﷺর উপস্থিতিতে উচ্চস্বরে কথা বলতে নাই?

আপনি কী মনে করেন হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ মরে গেছেন, মাটির সাথে মিশে গেছেন? নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক। তিনি রওজা শরিফে জিন্দা৷ মাটির উপরে থাকতে যেভাবে তাঁর সামনে উচ্চস্বরে কথা বলা নিষেধ তেমনি রওজা পাকে শুয়ে থাকার পরও একই হুকুম। কারণ তিনি হায়াতুন নবি, জিন্দা নবী। আপনি কী জানেন না নবীজির ﷺ উপস্থিতিতে উচু আওয়াজে কথা বললে সব আমল নষ্ট হয়ে যায়?

খলিফা মনসুর তার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
'মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।" (৪৯ঃ২)

সূরা হুজরাতের এই আয়াত খানা আজো রওজা শরিফের উপরে শোভা পাচ্ছে। (ছবি কমেন্ট বক্সে দেখুন, যদিও তা ওসমানী খেলাফাতের সময়ে যোগ করা হয়েছে যা আজো অক্ষত। বর্তমান সৌদি বাদশাহ পরিবার তা করে নাই।)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺর প্রতি যে কয়েকটা দায়িত্ব এই উম্মতের জন্য আবশ্যক করেছেন তার অন্যতম প্রধান হচ্ছে প্রিয় নবিজি ﷺকে তাজিম করা, সম্মান করা, তাওকির করা। যা সুস্পষ্টভাবে সূরা ফাতহের ৮ ও ৯ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। প্রিয় নবিজীকেﷺ সম্মান করা তাই এই উম্মতের উপরে ফরজ। ইন্তেকালের আগে ও পরে উভয় অবস্থায়। কারণ অসংখ্য হাদিস প্রমাণ করে তিনি আজো রওজা পাকে জীবিত।
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি স্বাক্ষী হিসেবে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।
لِّتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল- সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর। (৪৮ঃ৮-৯)

হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺর জানাজার ইমাম হতে অস্বীকার করে বলেছেন, নবী করিম ﷺ ইন্তেকালের আগে ও পরে সব সবসময় আমাদের ইমাম। তাঁর শরীর মুবারক সামনে রেখে ইমাম হয়ে কেউ জানাযা পড়াবে এই দুঃসাহস কার। যেজন্য সাহাবায়ে কেরাম দলে দলে ভাগ হয়ে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ এঁর ঘরে প্রবেশ করে যার যার মত দরুদ ও সালাম পাঠ করেছেন, দোয়া করেছেন, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করেছেন। কিন্তু এই কারণে আনুষ্ঠানিক জানাজা হয়নি।

বুখারি শরিফের সহিহ হাদিসে এসেছে, উরওয়া ইবনে মাসউদ রাঃ ইসলাম গ্রহণের আগে যখন মক্কার কুরাইশদের পক্ষ থেকে দূত হয়ে হুদায়বিয়া প্রান্তরে শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে গেলেন, তারপর ফিরে এসে মক্কার মুশরিক নেতাদেরকে বললেন, তোমরা মুহাম্মদকে (ﷺ ) আক্রমণ করার কথা চিন্তাও করো না। আমি পারস্যের বাদশাহ কিসরার দরবারে গিয়েছি, রুমের বাদশা কায়সারের দরবারে গিয়েছি কিন্তু

"মা রায়াইতু আহাদান ইউয়াইজ্জিমু আহাদা
কামা ইউআজ্জিমু আসহাবু মুহাম্মাদিন মুহাম্মাদা।"

"আমি কাউকে দেখিনি কভূ করিতে এমন সম্মান,
যেমন তাজিম করেন মুহাম্মদকে তাঁর সাথীগণ"।

আমি দেখলাম, যখন তিনি কাউকে কোন কাজের আদেশ করেন, তখন সে দ্রুত সে কাজ সমাধা করে। তিনি ওজু করলে সেই পানি নিয়ে মনে হয় যেন তাঁর সাহাবাগনের মাঝে যুদ্ধ লেগে গেছে৷ কেউ সরাসরি সেই ওজুর পানি না পেলে অন্য ভাইয়ে হাতে মুসাফাহা করে তা মুখে ও শরীরে মাখেন। তিনি থুথু ফেললে তা মাটিতে পড়ে না, বরং কেউ না কেউ তা হাত পেতে নিয়ে মুখে ও শরীরে মাখেন।

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকুঃ তাঁর সাহাবীরা যখন তাঁর সামনে বসে তখন মাথা এমনভাবে নিচু করে রাখে যেন তাঁদের ঘাড়ের উপরে একটা করে পাখি বসে আছে। যেন ঘাড় একটু ওঠালেই পাখিটি উড়ে চলে যাবে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা! লক্ষ্য করুন সৌদি এই মৌলভীর ছবিটি, অন্তর দিয়ে অনুধাবন করুন কী ছিল সাহাবায়ে কেরামের আদব আর কোথায় এখন মক্কা শরিফ মদিনা শরিফের কিছু নামধারী মৌলভিদের আদব।

আসলে এদের অন্তরে প্রিয় নবিজীর ﷺ প্রতি ভালোবাসা কতটুকু আছে তা আল্লাহ পাক জানেন, যেই ভালোবাসা ইমানের জন্য শর্ত। কারণ তাজিম, সম্মান, আদব এসব আসে তো ভালোবাসা থেকে। যে যাকে ভালোবাসে তাকে সম্মান করে এটাই স্বাভাবিক।

একবার বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু আইয়্যুব আনসারি রাঃ হুজুর রাসুলুল্লাহ রﷺ রওজা শরিফ জিয়ারতে আসলেন। এসে রওজা শরিফের সামনে একটি পাথরের উপরে মাথা গুজে বসে আছেন। পাশ দিয়ে কুখ্যাত উমাইয়া বাদশাহ মারওয়ান যাচ্ছিল৷ উনাকে চিনতে না পেরে উনার হাটুতে ধরে সে চীৎকার করে বলল, তুমি কী জান তুমি কী করছ?

হজরত আবু আইয়্যুব আনসারি রাঃ মাথা তুলে বললেন, হ্যাঁ আমি জানি। মারওয়ান দেখল তিনি বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু আইয়্যুব আনসারি রাঃ। মারওয়ানের দিকে মুখ করে তিনি বললেন, "আমি হুজুর রাসুলুল্লাহরﷺ কাছে এসেছি, কোন পাথরের কাছে আসি নাই। প্রিয় নবিজি ﷺ বলে গেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা দ্বীন নিয়ে ক্রন্দন করো না যতক্ষণ যোগ্য লোক দ্বীনের নেতৃত্বে আছে। তোমরা তখন ক্রন্দন করো যখন অযোগ্য লোক নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হবে।"

(তথসূত্রঃ ইমাম হাকিম তাঁর মুসতাদরাক আলাস সাহিহাইন কিতাবে এনেছেন এবং সহিহ বলেছেন। শায়খ ইবনে তাইমিয়া সাহেবের ছাত্র ইমাম জাহাবি রাহ.ও এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন। খন্ড-৪, পৃষ্ঠা নং-৫৫০)



Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!