উত্তর:আরব আল মুস্তারিবাহ বলতে আরবের উত্তর দিকে বসবাসরত অধিবাসীদের বোঝায়। হযরত ইসমাঈল (আ) এর বংশধর আদনানের প্রতিষ্ঠিত জাতি আরব আল মুস্তারিবাহ নামে পরিচিত। আদনানের দুজন বংশধর ছিল নিযার ও মাদার। এজন্য ইসমাঈলীয় সম্প্রদায় তাদের পূর্ব পুরুষদের নামানুসারে, আদনানীয় বা নিযারীয় বা মুদারীয় নামেও পরিচিত ছিল। আমাদের প্রিয়নবি (স) আরব আল মুস্তারিবা জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
উত্তর : সুখী আরব ভূমি বলতে দক্ষিণ আরব অর্থাৎ ইয়েমেন, হাজরামাউত ও ওমান অঞ্চলকে বোঝায়। উল্লিখিত অঞ্চলসমূহে পাহাড়ি ও অনাবাদি ভূমি থাকলেও কয়েকটি উর্বর ও বিস্তৃত উপত্যকা রয়েছে। এ উর্বর ভূখণ্ডে কফি, নীল, খেজুর, শাকসবজি, বিভিন্ন ফল ও ফসলের উৎপাদন হয়ে থাকে। এ অঞ্চলগুলো কৃষি উৎপাদন, ব্যবসা- বাণিজ্য, রকমারি পণ্যদ্রব্যের কেন্দ্রস্থল ও ধন-সম্পদের কেন্দ্রভূমি হওয়ায় প্রাচীনকালে এগুলোকে 'সুখী আরব ভূমি' বা আরবদের সৌভাগ্য বলা হতো।
যেসব জাতিগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট আবাসভূমি নেই, বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় তাদেরকে যাযাবর বলে।উত্তর মুহম্মদ রেজা-ই-করিমের মতে, 'যে সকল আরব মরুপ্রান্তরকে ভালোবেসে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে তারাই যাযাবর।' এজন্য তাদেরকে আহল আল বাদিয়া বা মরুবাসীও বলা হয়। যাযাবররা কোথাও স্থায়িভাবে বসবাস করে না বরং তারা গৃহপালিত পশুর ঘাস ও পানির সন্ধানে এক উদ্দাম জীবনযাপন করে। যাযাবর শ্রেণির মধ্যে গোত্রপ্রীতি, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও আতিথেয়তা প্রভৃতি চারিত্রিক গুণাবলি লক্ষ করা যায়।
উত্তর: সাধারণ অর্থে সভ্যতা বলতে মানবজাতির বিকাশিত অবস্থাকে বোঝায়। যা অসভ্য নয় তাই সভ্য। আর যে সমাজ ও পরিবেশ সভ্য ও অসভ্য এর ভেদাভেদ করতে শেখায় তাই সভ্যতা। সভ্যতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Civilization। এ শব্দটি Civis বা Civitas থেকে এসেছে, যার অর্থ নাগরিক। কোন অঞ্চল বা অঞ্চলসমূহে যখন একটি জনগোষ্ঠী নগর তৈরি করে এক উন্নতর জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলে তখন তার অগ্রগতির সহায়ক নিয়ামক হিসেবে উদ্ভাবিত হয় লিখন পদ্ধতি, আইন, সরকার ব্যবস্থা, নবপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও সুস্পষ্ট ধর্মীয় দর্শন প্রভৃতি। আর এগুলোর সম্মিলিত রূপই হচ্ছে সভ্যতা। যুগ যুগ ধরে বিখ্যাত চিন্তাবিদ, বিজ্ঞানী, ধর্মীয় নেতারা মানবজীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করার জন্য মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় জীবনধারার উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে সভ্যতা সৃষ্টি করেছেন।
/ উত্তর: আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে ইসলামপূর্ব অরাজক ও বিশৃঙ্খল সময়কে বোঝায়। 'আইয়ামে জাহেলিয়া' আরবি শব্দ। 'আইয়াম' অর্থ যুগ এবং 'জাহেলিয়া' অর্থ তমসা, অজ্ঞতা, বর্বরতা বা কুসংস্কার। মহানবি (স)-এর আবির্ভাবের পূর্বের প্রায় একশ বছর সময়কালকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়। এ সময় আরবের মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার নৈতিকতা, সততা, দায়িত্বজ্ঞান ও শালীনতা ছিল না। অন্যায়-অনাচারে সমাজ ভরপুর ছিল। এ জন্য এ সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকারের যুগ বলা হয়।
উত্তর: জাজিরাতুল আরব বলতে আরব ভূখণ্ডকে বোঝায়। 'জাজিরা' আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ দ্বীপ বা উপদ্বীপ। আরব একটি ভূখণ্ডের নাম। তাই জাজিরাতুল আরব অর্থ আরব উপদ্বীপকে বোঝায়। এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আরব দেশ বিশ্বের সর্ববৃহৎ উপদ্বীপ। মূল স্থল ভাগের সাথে যুক্ত কিন্তু বেশিরভাগ অংশ সাগর দিয়ে বেষ্টিত কোনো ভূখণ্ডকে উপদ্বীপ বলা হয়। আরব ভূখণ্ডের তিন দিকে বিশাল জলরাশি এবং একদিকে বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তর দিয়ে ঘেরা। এর পশ্চিমে লোহিত সাগর, পূর্বে পারস্য উপসাগর,দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং উত্তরে সিরিয়ার মরুভূমি রয়েছে। এরূপ ত্রিভুজাকৃতির ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই আরব দেশকে জাজিরাতুল আরব বলা হয়।
উত্তর: মরু অঞ্চলে চলাচলের উপযোগী বাহন হওয়ায় উটকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়। আরবের অধিকাংশ অঞ্চলই মরুময়। আর প্রাচীন ও মধ্যযুগে উত্তপ্ত মরুঅঞ্চলে উট ছিল চলাচলের একমাত্র উপযোগী প্রাণী। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় মরুময় আরবে এটি বর্মাধিক গৃহপালিত প্রাণী। মরুবাসীরা খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ, যোগাযোগ এবং ক্রয়-বিক্রয়ের প্রধান বাহন হিসেবে উট ব্যবহার করে। তাই একে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়।
উত্তর: স্থাপত্যশিল্পে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য মিসরীয়দের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা বলা হয়। মিসরীয়দের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যিক নিদর্শন হলো তাদের পিরামিডগুলো। তাদের নির্মিত পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ফারাও খুফুর পিরামিড। এছাড়া পাথর কেটে প্রকান্ড সৌধ বানাতে তারা ছিল সিদ্ধহস্ত। তারা বড় বড় পাথর কেটে চমৎকার মূর্তি বানাত। এদের মধ্যে স্ফিংকস, ইখনাটন ও রানি নেফারতিতির মূর্তি অন্যতম। এসব অসাধারণ স্থাপত্য নির্মাণের জন্যই মিসরীয়রা ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ নির্মাতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
উত্তর: মিসরীয়দের উদ্ভাবিত লিখন পদ্ধতি 'হায়ারোগ্লিফিক' নামে পরিচিত। 'হায়ারোগ্লিফিক' লিখন পদ্ধতিতে নানা প্রকার দ্রব্যের ছবি আঁকা থাকত। এ থেকে জিনিসগুলোর পরিচয় ও নাম জানা সম্ভব হতো। হায়ারোগ্লিফিক লিপি প্রথমে তৈজসপত্রে, ফলক এবং কবরে মৃতের পরিচয়ের ফলক আকারে গায়ে খোদাই করা হতো। পরে প্যাপিরাস কাগজ আবিষ্কৃত হলে এতে এ লিপি উৎকীর্ণ করা হয়। প্রায় ৭৫০টি চিত্রলিপির চিহ্ন দিয়ে এ প্রাচীন মিসরীয় লিপি পদ্ধতি তৈরি হয়েছিল। আর এ সমস্ত চিত্রলিপিই হায়ারোগ্লিফিক নামে পরিচিত।
উত্তর: অর্ধচন্দ্রাকার উর্বর ভূমি বলতে প্রাচীন মেসোপটেমীয় অঞ্চলকে বোঝায়। 'মেসোপটেমিয়া' একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি। ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল মেসোপটেমিয়া নামে পরিচিত। এ অঞ্চলটি নদীকেন্দ্রিক হওয়ায় উর্বর ছিল। মূলত উর্বরতা ও অর্ধচন্দ্রের মতো আকৃতির কারণে আমেরিকান ভূগোলবিদ ব্রেসটেট (James Henry Breasted) Fertile Crescent বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি উর্বর ভূমি বলে আখ্যায়িত করেন।
উত্তর: পিরামিড হলো মিসরীয়দের নির্মিত পাথরের তৈরি বিশাল ও ত্রিকোণাকার সমাধিসৌধ। মিসরীয়দের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যিক নিদর্শন হলো পিরামিড। গ্রিক ভাষায় পিরামিড শব্দের অর্থ 'খুব উঁচু'। মিসরীয় রাজা- বাদশাদের মৃতদেহ মমি করে সংরক্ষণের জন্য পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল। মূলত ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই এগুলো নির্মাণ করা হয়। এ পর্যন্ত ৮০টির বেশি পিরামিডের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, যার ৭০টি কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও উঁচু হলো নীল নদের মরুময় গিজা অঞ্চলে অবস্থিত বিখ্যাত ফারাও খুফুর পিরামিড।
উত্তর: মিসরীয় সভ্যতার বিকাশে নীল নদের ভূমিকা অগ্রগণ্য ছিল বলে মিসরকে নীল নদের দান বলা হয়। মিসরীয় সভ্যতার সূচনাকারী লোকেরা পানির প্রাপ্যতা, কৃষি উৎপাদন, মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ, পশু পালনের জন্য তৃণভূমির সহজলভ্যতা ইত্যাদি বিষয়কে মাথায় রেখে নীল নদের তীরবর্তী অঞ্চলসমূহে বসতি স্থাপন করেছিল। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালের বন্যায় নীল নদের তীরবর্তী অঞ্চলসমূহে পলি জমা হতো এবং কৃষি উৎপাদনের মাধ্যমে মিসরীয় সভ্যতা সমৃদ্ধি লাভ করতে থাকে। তাই গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস মিসরের উৎকর্ষ দেখে মিসরকে 'নীল নদের দান' বা 'The Gift of the Nile' বলে উল্লেখ করেছেন।
: উত্তর ও দক্ষিণ মিসরকে একত্রিত করার মাধ্যমে রাজা মেনেস ফেরাউনের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। প্রাক-রাজবংশ যুগাবসানের পর মিসর উত্তর মিসর এবং দক্ষিণ মিসর এ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে এ দু'অংশকে একত্র করে মেনেস তার শাসক নিযুক্ত হন। তাঁর রাজধানী স্থাপিত হয় মেমফিস শহরে। মিসরীয় রাজা-বাদশাহদের ফেরাউন বলা হতো। এভাবে রাজা মেনেস ফেরাউনের মর্যাদা লাভ করেন।
উত্তর: সুমেরীয়দের উদ্ভাবিত লিখন পদ্ধতি ইতিহাসে কীলকাকার বা কিউনিফর্ম নামে পরিচিত। প্রথম দিকে সুমেরীয় লিপি ছিল মিসরীয়দের মতো চিত্রলিপিভিত্তিক। পরবর্তীকালে নিজেদের লেখাকে গতিশীল করতে তারা নতুন লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন করে যা 'কিউনিফর্ম' (Cuneiform) বা কীলকাকার নামে পরিচিত। সুমেরীয়রা কাদামাটির প্লেটে খাগের কলম (Reed Pen) দিয়ে কৌণিক কিছু রেখা ফুটিয়ে তুলত। খাঁজকাটা চিহ্নগুলো দেখতে অনেকটা তীরের মতো। কিউনিফর্মকে বলা হয় অক্ষরভিত্তিক চিত্রলিপি। এ লিপি বামদিক থেকে ডানদিকে লেখা হতো। সুমেরের বিখ্যাত শহর নিপ্পরে সুমেরীয় এ কীলকাকার চিত্রলিপির প্রায় চার হাজার মাটির চাকতি পাওয়া গেছে।
উত্তর: জাহেলি যুগে নারীদের কোনো সামাজিক মূল্য ছিল না বলে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। জাহেলি যুগে আরব সমাজে সবচেয়ে জঘন্য প্রথা ছিল নবজাতক কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া। কারণ কন্যা সন্তানের জন্মকে তারা অভিশপ্ত ও লজ্জাকর মনে করত। তারা কন্যাসন্তান জন্ম নিলে খুশি হতো না। কন্যার জন্ম সংবাদ দেওয়া হলে তাদের চেহারা লজ্জায় কালো হয়ে যেত। এটা তাদের কাছে ছিল এক চরম লজ্জার ব্যাপার। অনেক পিতা এ চরম লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য, আবার অনেকে দারিদ্র্যের ভয়ে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিত।