একি অপরূপ রূপে মা তোমায়
-কাজী নজরুল ইসলাম
একি অপরূপ রূপে
মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।
ফুলে ও ফসলে
কাদা মাটি জলে ঝলমল
করে লাবনি।
রৌদ্রতপ্ত
বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে
চাহ জল,
আম কাঁঠালের মধুর
গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।
ঝঞ্ঝার
সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল
ল'য়ে অশনি।
কেতকী-কদম-যূথিকা কুসুমে
বর্ষায় গাঁথ মালিকা,
পথে অবিরল ছিটাইয়া
জল খেল চঞ্চলা বালিকা।
তড়াগে
পুকুরে থই থই করে
শ্যামল শোভার নবনী।
শাপলা
শালুক সাজাইয়া সাজি শরতে শিশির
নাহিয়া,
শিউলি-ছোপানো শাড়ি পরে ফের আগামনী-গীত গাহিয়া।
অঘ্রাণে
মা গো আমন ধানের
সুঘ্রাণে ভরে অবনি।
শীতের শূন্য মাঠে তুমি ফের
উদাসী বাউল সাথে মা,
ভাটিয়ালি গাও মাঝিদের সাথে
গো, কীর্তন শোনো রাতে মা।
ফাল্গুনে
রাঙা ফুলের আবিরে রাঙাও নিখিল ধরণী।।
বিশ্লেষণাত্বক রচনা:
'একি অপরূপ রূপে
মা তোমায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল
ইসলামেরদেশত্ববোধক একটি গান। এ
গানে কবি তাঁর প্রিয়
মাতৃভূমির বন্দনা করেছেন। কবি তাঁর মাতৃভূমির
অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন।
কবি দেখেন- তাঁর দেশ ফুলে-ফসলে ভরা, আম-কাঁঠালের মধুর গন্ধে চারিদিক
মুখরিত। কবির বর্ণিত মাতৃভূমির
সাথে আমিও আমর জন্মস্থান
পলাশডাঙ্গার ভীষণ মিল খুঁজে
পাই। আমার গ্রামটিও ফুলে-ফলে সুশোভিত। দিগন্তজোড়া
ফসলের মাঠ, চারিদিকে মৌসুমি
ফলের গন্ধ মৌ মৌ
করে। কবি বিভিন্ন ঋতুতে
তার গ্রাম কেমন হয়, তা
বর্ণনা করেছেন। বৈশাখে কবির গ্রামে ভীষণ
ঝড় হয়, আবার বর্ষায়
কদম ভুলের সমারোহ কবির মনকে আনন্দ
দেয়। শরতে শাপলা আর
শীতে শিউলি ফুলের অবিরাম সৌন্দর্য অবলোকন করেন কবি।
আমার
ছোট গ্রামটিও ঠিক এমনই ছবির
মত সুন্দর। ঝড়ের দিনে বৈশাখি হাওয়ায়
ভীত হয়ে যায় মানুষ।
আমার গ্রামে শরতে বিলের ধারের
খোলা মাঠে সাদা কাশফুলের
বনে দৌড়ে বেড়ায় শিশু- কিশোরের দল। শীতে খেজুরের
রস, নানা রকমের পিঠা-পুলি আমার গ্রামটি
রূপকথার মত সন্দর করে দিয়েছে।
কবির গ্রামে অগ্রহায়ণ মাসে ধানের সুঘ্রাণ
ছড়ায়। আমার গ্রামেও এ
মাসে ধান পাকে, কৃষকরা
দল বেধে ধান তোলে।
কবি দিন শেষে ভাটিয়ালি
গান গান, কীর্তন শোনেন।
তবে কবির সাথে এখানে
আমার গ্রামের একটি পার্থক্য হচ্ছে
যে, আমার গ্রামে এখন
আর ভাটিয়ালি গান শোনা যায়
না। সময়ের বিবর্তনে গ্রাম-বাংলার এই পুরোনো এই
ঐতিহ্য এখন বিলুপ্ত প্রায়
।