গ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শিশু ভোলানাথ' কাব্যগ্রন্থ
থেকে 'মনে পড়া' কবিতাটি
পড়ে কবিতায় কবির মায়ের সাথে
কবির স্মৃতির সাথে তোমায় মায়ের
সাথে তোমার স্মৃতি মিলিয়ে একটি বিশ্লেষনাত্বক রচনা
তৈরি করো। সাথে মায়ের
একটি ছবিও নিজের মত
করে আঁকো (শিক্ষক এই কবিতাটি শিক্ষার্থীদের
বোর্ড / প্রেজেন্টার / পোস্টারে লিখে দেখাবেন )
- রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
মাকে আমার পড়ে না মনে
শুধু কখন খেলতে গিয়ে
হঠাৎ
অকারণে
একটা কী সুর গুনগুনিয়ে
কানে আমার বাজে,
মায়ের কথা মিলায় যেন
আমার খেলার মাঝে।
মা বুঝি গান গাইত,
আমার দোনা ঠেলে ঠেলে;
মা গিয়েছে, যেতে যেতে
গানটি
গেছে ফেলে।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন আশ্বিনেতে
ভোরে শিউলিবনে
শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে
ফুলের গন্ধ আসে,
পুজোর
গন্ধ আসে যে তাই
মায়ের
গন্ধ হয়ে ।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন বসি গিয়ে
শোবার ঘরের কোণে;
জানলা থেকে তাকাই দরে
নীল আকাশের দিকে
মনে হয় মা আমার পানে
চাইছে অনিমিখে।
বিশ্লেষণাত্মক রচনা:
‘মনে পড়া' কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শিশু ভোলানাথ' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এ কবিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মায়ের প্রতি সন্তানের এক অকৃত্রিম ভালোবাসার ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। পৃথিবীর প্রতিটি সন্তানেরই তার মায়ের সাথে অনেক মধুর স্মৃতি থাকে, যা সে কখনোই ভুলতে পারে না। কবি যখন খেলতে যান তখন তাঁর মায়ের কথা মনে পড়ে। কারণ, তাঁর মা তাঁকে দোলনা ঠেলে দিত আর গুনগুনিয়ে গান গাইত। আমার মাও ঠিক তাই, যখন আমি ঘুমাতে যেতাম, তখন আমার মা মাথায় হাত বুলিয়ে গুনগুনিয়ে গান করতেন আর আমি হারিয়ে যেতাম ঘুমের অতল রাজ্যে। সেই গান, সেই সুর এখনও আমার কানে বাজে। কবির শীতের ঠাণ্ডা হাওয়ায় মায়ের কথা মনে পড়ে, শিউলি ঝড়া ভোরের হাওয়ায় মাকে মনে পড়ে। আমার মাও শীতে আমার জন্য বিভিন্ন পিঠা-পুলি বানাতেন, আর আমি যে মজার সাথে সেগুলো খেতাম, তা তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতেন। পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের মতই আমার মা'ও আমাকে গভীর মমতায় আগলে রাখতেন। শৈশবে আমার মায়ের সাথে এই স্মৃতিমধুর সময়গুলো আমি কখনোই ভুলতে পারব না।