নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৫ সদস্য

Muhammad Jamal Uddin
0

 

নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৫ সদস্য


বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড

                    নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৫ সদস্য

  

মূল পরিকল্পনাকারী মেজর ফারুক তার সহযোগী ছিলেন তার ভায়রা মেজর রশীদ । এদের  তত্ত্বাবধানে খন্দকার মোশতাক ও মেজর জিয়ার সমথর্নে সেনাবাহিনী একটি বিপথগামী দল এ র্নিমম হত্যাকাণ্ড চালায়।

১৫ আগস্টের নীল নকশা

১. ৩২ নম্বর ধানমণ্ডি – মেজর বজলুল হুদা ও মেজর নুর চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ।

২. মিন্টু রোড, আব্দর রব সেরনিয়াবাত – মেজর রাশেদ চৌধুরী ও মেজর ডালিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

৩. শেখ ফজলুল হক মণি – রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন।

৪.রক্ষীবাহিনী মোকাবিলা ও ‍নিয়ন্ত্রণ – মেজর ফারুক

[দেখুন পলাশি থেকে ধানমণ্ডি- আব্দুল গাফফার চৌধুরী]

 👉 ১৫ আগস্ট ভোর ৫.১৫ মিনিটে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর আক্রমণ করা হয় এবং সবর্প্রথম শেখ কামালকে হত্যা করা হয়।

 👉 ভোর ৫ টা ৪০ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

 👉 তাঁর শরীরে ২৪ টি মতান্তরে ২৮ টি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া যায়।

 👉বঙ্গবন্ধুর শেষ কথা ‘’ তোমরা কী চাও ! তোমরা কি আমাকে হত্যা করতে এসেছ ? তা ভুলে যাও, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তা করতে পারেনি। তোমরা কে যে তা পারবে ? ‘’

 👉 ৩২ নম্বর বাড়ি আক্রান্ত হলে বঙ্গবন্ধু ফোন করেন :

১. চিফ অব স্টাফ কেএম শফিউল্লাহ ;

২.রক্ষীবাহিনীর সদর দফতর ও

৩.বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদকে।

 

নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য (১৫)

        বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

                বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা

     শেখ আবু নাছের

      শেখ কামাল

         শেখ জামাল

   শেখ রাসেল

         সুলতানা কামাল

    রোজী জামাল

        আব্দুর রব সেরনিয়াবাত

     বেবী সেরনিয়াবাত

        আরিফ সেরনিয়াবাত

        সুকান্ত বাবু

.      আবু নঈম রিন্টু

       শেখ ফজলুল হক মণি

  .    আরজু মণি

 👉 ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন বেলজিয়ামে তারা বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায় অবস্থান করছিলেন। তাদেরকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর তখনো জানানো হয়নি। এ ঘটনায় তাদেরকে জার্মানিতে ড. ওয়াজেদ মিয়ার নিকট ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় । জার্মানির রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ভারতের সাথে আলোচনা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের দিল্লিতে থাকার ব্যাবস্থা করেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ১৯৮১ সালের ১৬ মে পর্যন্ত তিনি দিল্লিতে  রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন।

 

 

১৫ আগস্ট যারা নিহত  হয়েছিলেন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য  , আত্মীয়স্বজনসহ নিহত হন আরও ২৬ জন । এদের মধ্যে যারা রয়েছেন:

 💨 শেখ কামাল

বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে 

জন্ম : টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, আগস্ট ১৯৪৯ বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ঢাকার শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ আনার্স পাস করেন। ছায়ানটে সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি নাটক, মঞ্চ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একনিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন। ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে ছিলেন প্রতিষ্ঠিত।  ৈশশব থেকেই খেলাধুলায় ছিল তার প্রচণ্ড উৎসাহ। আবাহনী ক্রীড়াচত্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। 

বিশেষ করে ফুটবল ক্রিকেটের মানোন্নয়নে তার শ্রম অবদান ছিল অপরিসীম। নতুন  খেলোয়াড় তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় দিয়ে নিজেই মাঠে অনুশীলন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৮ দুলাই সুতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ছাত্রলীগের একজন সংগঠক হিসেবে৬৬-এর স্বাধিকার আন্দোলন, ৬৯ - এর গণ আন্দোলন ৭১- এর অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই বাড়ি থেকে চলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। লেফটেন্যান্ট হিসেবে কর্ণেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার সমসয় তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ওই দিন ভোরে বাড়ি ঘেরাওয়ের কথা শুনে নিচে নেমে ঘাতকরা সবার আগে তাকে গুলি করে হত্যা করে।

 

 💨 শেখ জামাল

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় ছেলে

জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ ২৮ এপ্রিল ১৯৫৪

বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামাল শৈশবে শাহীন স্কুল ও পরে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল তেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। একটি সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রে গিটার বাজানো শিখতেন। ক্রিকেট খেলতেন আবাহনী মাঠে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তাতে ধানমণ্ডি ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বন্দী থাকাকালে একদিন গোপনে বের হয়ে কালীগঞ্জ হয়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

 

ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে থাকাকালে যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটোর আমন্ত্রণে সেদেশে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিতে যান। তার পর লন্ডনের স্যান্ডহার্স্টি আর্মি একাডেমি থেকে সেনা প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে তিনি দ্বিতীয়   ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট র‌্যাংকে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ দুলাই ফুফাতো বোন রোজীর স্েগ তার বিয়ে হয়। ১৫ আগস্ট তাদের একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়।

 💨 শেখ রাসেল

বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র

জন্ম : ঢাকা ১৮ অক্টোবল ১৯৬৪ সাল

বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যঅবরেটরি হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল । বাড়ির ছোট্ট ছেলে হিসেবে সবার আদরের ছিল।  রাজনৈতিক পরিবেশ ও সংকটের মধ্যেও সে চিরসঙ্গী সাইকেল নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয় মাস পিতার আদর্শ তাকে এমনই ভাবপ্রবণ করে রাখে যে , পরে সবসময় পিতার কাছাকাছি থাকতে জেদ করত। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবনধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করে তাদের  লাশ দেখিয়ে তারপর রাসেলকে হত্যা করা হয়। তাকে কাজের লোকজন পেছনের সিড়িঁ দিয়ে নিচে নিয়ে যায়। কিন্তু ঘাতকরা তাকে দেখে ফেলে । বুলেটবিদ্ধ করার পূর্বে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়অ হয়। রাসেল প্রথমে মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কন্ঠে মিনতি করেছিল ’আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন’

 💨 শেঝ আবু নাসের

বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই

জন্ম : টুঙ্গিপাড়া , গোপালগঞ্জ সেপ্টেম্বর ১৯২৮ সাল।

শেখ আবু নাসের টুঙ্গিপাড়া ও গোপালগঞ্জে লেখাপড়া করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবং বড় ভাই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অল্প বয়সেই তাকে পিতার সঙ্গে পারিবারিক কাজকর্ম ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে হয় । এজন্য খুলনা শহরে বসবাস করতে হতো্ পরবর্তী সময়ে তিনি খুলনায় বিশিষ্ট  ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের্ ংশ নিয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৭৫ সালে নিহত হওয়ার সময় বড় ভাইয়ের বাড়িতে ছিলেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে যান।

 

 💨 সুলতানা কামাল খুকু

শেখ কামালের স্ত্রী

জন্ম : ঢাকা, ১৯৫১ সাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাহী প্রকৌশলী দবির উদ্দিন আহমেদের ছোট মেয়ে। মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে মাধমিক পরীক্ষা পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অর্নাস পাস করেন। ১৯৭৫ সালে এমএ পরীক্ষা দেন। স্কুল থেকে আন্তঃখেলাধুলায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে প্রতিভার স্বাকষর রাখেন। বিশেষ করে লংজাম্পে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক ক্রীড়ায় চ্যাম্পিয়ন হন।

মোহামেডান ক্লাবের পক্শে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান অলিম্পিকে লংজাম্পে দ্বিতীয়, ১৯৬৮ সালে ঢাকার মাঠে পাকিস্তান অলিম্পিকে লংজাম্পে ১৬ ফুট দূরত্ব অতিক্রমের রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক পান। এর আগে ডাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯-৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় ক্রীড়ায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে নিখিল পাকিস্তান মহিলা এথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় তিন রেকর্ডসহ স্বর্ণজদক পান। ১৯৭৩ সালে লংজাম্পে স্বর্ণ পান। ১৯৮৭ সালে লংজান্প ছাড়াও সুলতানা ১০০ মিটার হার্ডলসে কেকর্ড গড়ে  স্বর্ণপদক অর্জন করেন। বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিয়ের আগে তাকে দেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। বাড়ির বড় বউ হিসেবে তার বিপুল সমাদর হয়েছিল।

 

 💨 পারভীন জামাল রোজী

শেখ জামালের স্ত্রী

জন্ম : সিলেট ১৯৬৫ সালে।

বঙ্গবন্ধু ছোট্ট বোন খাদেজা হোসেনের মেয়ে । জিতা সৈয়দ হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রাণালয়ের সচিব ছিলেন। ধানমণ্ডি র্গালস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বদরুন্নেসা আহমেদ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাত্র ৩০ দিনের বিবাহিত জীবন ছিল তার । মেহেদির রং তখন ও তার দু’হারেত ছিল। বেগম মুজিবকে হত্যা করে ঘাতকরা জামালের পাশে দাড়িঁয়ে থাকা রোজী ও সুলতানাকে একসঙ্গে গুলিকরে হত্যা করে। ওই বাড়িতে দুবধূর শুভাগমন যেমন একসঙ্গে তেমনি শো্কাহত বিদায় ও একসঙ্গে।

 💨 আবদুর রব সেরনিয়াবাত

বঙ্গবন্ধুর সেজো বোনের স্বামী

জন্ম : বরিশাল, ১৪ চৈত্র ১৩২৭ বাংলা ।

বরিশাল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ছিলেন। বেকার হোস্টেলে ও এক সঙ্গে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর সেজো বোন আমেনা বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কলকাতায় আইএ ও বিএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে এলএলবি পাস করে বরিশালে আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্তী হয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন্ ১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী হন। ১৯৭৩ এর নির্বাচনেও জয়লাখ কেরেন। বঙ্গবন্ধু তাকে সেচ ও বন্যা নিন্ত্রণমন্ত্রী নিয়োগ দেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার ও উৎপাদনে এবং কৃসকদের সহায়তা দেওয়ায় তার ভূমিকা ছিল যথেষ্ট জোরালো । একজন সৎ, আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে তিনি সব মহলে প্রশংসিত ছিলেন।

 💨 শেখ ফজলুল হক মণি

বঙ্গবন্ধুর মেজো বোনের বড় ছেলে

জন্ম : টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ ৪ ডিসেম্বর ১৯৩৯ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ অনুসারী, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাংবাদিক , দৈনিক বাংলার বাণী ও বাংলাদেশ টাইমসে প্রতিষ।ঠাতা সম্পাদক, সাপ্তাহিক ‘সিনেমা’ ও মধুমতি মুদ্রণালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৫৬ সালে ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৮ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে ইউএ ১৯৬০ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ এবং পরবর্তী সময়ে এলএলবি পাস করেন।

ছাত্রাবস্থায়ই শেখ মণি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬০ সালে তিনি ছাত্রলীগের  কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে চাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার কারা হয়। ছয় মাস বিনাবিচারে আটক থাকার  পর তিনি মুক্তি পান।

 গণবিরোধী শিক্ষানীতি ও সরকারের দমননীতির প্রতিবাদে ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে তদানীন্তন গভর্নরেোমনায়েম খানের তাহ থেকে ডিগ্রি সার্টিফিকেট না নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শেখ মণির এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেওয়া হয় । কিছুদির পর তিনি গ্রেফতার হণ। ১৯৬৫ সালের শেষ পর্যন্ত তাকে দেশরক্ষা আিইনে আটক রাখা হয়। এ সময় সরকার তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সাজানো মামলা দায়ের করে।

১৯৬৬ সালে শেখ ফজলুল হক মণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রজমান প্রণীত বাঙালির স্বাধিকারের সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফার পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছয় দফা আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করা এবং ঐতিহাসিক ৭ জুনের হরতাল সর্বাত্মক সফল করার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ অবদান  রাখেন । ওই সময় সরকার শেখ মণির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে তাকে গেুফতার করা হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর েমুক্তিযোদ্ধা ও যুবসমাজকে সংগঠিত করে দেশগড়ার কাজে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে শেখ মণি বঙ্গবন্ধুর নিদের্শে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর আযলামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তেজগাঁও আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সভাপতি হিবেবে মণি  শ্রমিক লীগ ও ইৗয়ামী লীগের বিভিন্ন  সাংগঠনিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা  করলে শেখ মণি অন্যতম সম্পাদক নিযুক্ত হন।

শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৭৩ সালে বার্লিন যুব উৎসবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি বিশ্ব শান্তি আন্দোলনের সঙ্গে ও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন সফল সংগঠক , সুবক্তা ও সুলেখক । সম্পাদকীয় ছাড়াও তিনি স্বনামে ও ছদ্মনামে বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন্ ছয় দফার ওপর ও তার লেখা িছোটগল্পের সংকলন ‘বৃত্ত’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ১৯৭৪ সালে শেখ মণির দ্বিতীয় গল্প সংকলন ‘গীতা রায়’ প্রকাশিত হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি ঘাতকের হাতে নিহত হন। সেই রাতে শেখ মণির জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ ও কনিষ্ঠ পুত্র শেখ ফজলে দূর তাপস অলৌকিকভাবে রক্ষা পায়। পরশের বয়স ছিল পাচঁ বছর ৈএবং তাপসের মাত্র তিন বছর।

 💨 বেগম আরজু মণি

শেখ ফজলুল হক মণির স্ত্রী

জন্ম  : বরিশাল ১৫ মার্চ ১৯৪৭

বরিশাল সরকারি উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং বিএম কলেজ থেকে উচ্চ্মাধ্যমিক ও বিএ পাস করেন। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের জ্যষ্ঠ কন্যা ছিলেন। ১৯৭০ সালে খালাতো ভাই শেখ ফজলুল হক মণির সঙ্গে বিয়ে হয়। দুসন্তানের মা আরজুকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা । ১৯৭৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

 💨 কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ

বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার

জন্ম : গোপালগঞ্জ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩।

 ১৯৫২ সালে ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৫৫ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সচিবালয়ে যোগ দেন এবং বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ ভোর ৫ টায় বঙ্গবন্ধু লাল টেলিফোনে তাকে সেনাবাহিনীর বাসভবন য়েরাওয়ের কথা জানারে সঙ্গে সঙ্গে রওন া হন তিনি। কিন্তু সোবহানবাগ মসজিদের সামনে ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর জীবনরক্ষার জন্য তিনি আত্মাহুতি দিয়েছেন। তার এ আত্মদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।

 

 💨 বেবী সেরনিয়াবাত

আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট মেয়ে

জন্ম :  বরিশাল ২০ মে ১৯৬০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন । নিহত হওয়ার সময় জিতার কাছে ছিলো ।

 💨 আরিফ সেরনিয়াবাত

আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র

জন্ম : ২৭ মার্চ ১৯৬৪

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। নিহত হওয়ার সময় ঢাকায় পিতার কাছে ছিলেন।

 

 💨 সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু

 আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নাতি

জন্ম : গৌরনদী বরিশাল ২২ জুন ১৯৭১ সাল।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র বাবু নিহত হওয়ার সময় বয়স ছিল ৪ বছর এবং ঢাকায় দাদার বাসায় বেড়াতে এসেছিল।

   💨 আবদুর বর সেরনিয়াবাতের ভাইয়ের ছেলে

জন্ম: বরিশাল ২৬ মার্চৃ ১৯৪০ সাল।

বরিশাল বিএম স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ঢাকা থেকে আইন পাস করে বরিশালে কোর্টে আইনজীবী ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলা পত্রিকাল বরিশালের সংবাদদাতা ছিলেন। ১৫ আগস্ট চাচার বাসায় অবস্থানকালে নিহত হন।

   💨  আবদুল নঈম খান রিন্টু

আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই

জন্ম : বরিশাল ১ ডিসেম্বর ১৯৫৭

বরিশাল জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। বরিশালের একটি সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন এবং তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় অবস্থানকালে নিহত হন।  

 

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!