নবীজী ﷺ নূরের তৈরি

Muhammad Jamal Uddin
0


নবীজী ﷺ নূরের তৈরি




নূর নবীজী ﷺ নূরের তৈরি নিচে দলিল ঃ

📚-নুর নবী ﷺ কিতাব থেকে

এবার  আমরা নূরের  দেহের  পক্ষের কিছু  রেওয়ায়াত  পেশ  করে  প্রমাণ করবো-  নবী  করীম  [ﷺ]-এঁর  দেহ  মোবারকও নূরের তৈরী ছিল। যথাঃ-

(১) যারকানী শরীফ ৪র্থ খন্ড ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেঃ
لَمْ يَكُنْ لَهٗ   صَلَّى   الله   عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظِلُّ فِى شَمْسٍ   وَلاَ  قَمَرٍ لِاَنَّهٗ كَانَ نُوْرًا

অর্থঃ- “সূর্য  চন্দ্রের আলোতে নবী করীম    [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকের ছায়া পড়তো  না। কেননা, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর।” (যারকানী)

(২) ইমাম কাযী আয়ায (رحمة الله  عليه)  শিফা শরীফের ১ম খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ
وَمَا  ذُكِرَمِنْ  اَنَّهٗ   كَنَ  لاَ   ظِلَّ   لِشَخْصِهٖ  فِى  شَمْسٍ   وَلاَ  قَمَرٍ   لِاَنَّهٗ  كَانَ نُوْرًا

অর্থঃ-  নূরের দলীল হিসেবে ছায়াহীন দেহের   যে রেওয়ায়াত পেশ করা হয়, তা হচ্ছে-  “দিনের    সূর্যের আলো কিংবা রাতের চাঁদের আলো-      কোনটিতেই    হুযুর  [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকের        ছায়া পড়তো না। কারণ তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর।” (শিফা শরীফ)

(৩) আশ্রাফ আলী থানবী সাহেব  তার شُكْرُ  النِّعْمَةِ بِذِكْرِرَحْمَةِ الرَّحْمَة গ্রন্থের ৩৯ পৃষ্ঠায় স্বীকার করেছেন:-
يه  بات    مشهور   هے   كه  همارے  حضور  صلى  الله  عليه  وسلم   كے جسم كا سايه نهين  تها (اس  لۓكے) همارے حضور  صلى الله عليه وسلم سرتاپا نور هى نور تہے

অর্থঃ- “একথা সর্বজন স্বীকৃত  ও প্রসিদ্ধ যে, আমাদের হুযুর [ﷺ]-এঁর দেহের ছায়া ছিল  না। কেননা   আমাদের হুযুর  [ﷺ]-এঁর মাথা  মোবারক  হতে   পা  মোবারক  পর্যন্ত  শুধু  নূর আর নূর ছিলেন।” (শোক্‌রে নে’মত)

(৪)  ইমাম  ইবনে  হাজর  হায়তামী              ’আন-নে’মাতুল কোবরা’ গ্রন্থের ৪১ পৃষ্ঠায় হাদীস লিখেনঃ
عن  عائشة رضي  الله  عنها انها قالت    كنت اخيط   في   السحر  ثوبا لرسول الله صلى الله  عليه وسلم  فانطفا  المصباح  وسقطت  الابرة من يدي فدخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم فأضاء البيت من نور وجهه فوجدت الابرة.

অর্থঃ-  হযরত  আয়েশা (رضي   الله  عنها)  হতে   বর্ণিত-   ”তিনি বলেন, আমি রাত্রে বাতির     আলোতে বসে নবী করীম [ﷺ]-এঁর  কাপড়  মোবারক  সেলাই  করছিলাম।  এমন  সময়  প্রদীপটি    (কোন কারণে) নিভে গেল এবং আমি সুঁচটি হারিয়ে ফেললাম। এর  পরপরই নবী করীম   [ﷺ]  অন্ধকারে আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর চেহারা মোবারকের নূরের জ্যোতিতে   আমার  অন্ধকার  ঘর   আলোময়  হয়ে   গেল  এবং আমি (ঐ আলোতেই) আমার হারানো সুঁইটি খুঁজে পেলাম।”

সুবহানাল্লাহ! মা আয়েশা (رضي    الله     عنها)     বলেন    নূরের চেহারা- আর তারা বলে মাটির চেহারা। নাউযুবিল্লাহ!

(৫) মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব তাঁর عُمْدَةُ النُّقُوْل গ্রন্থে লিখেছেনঃ-
والذي يدل على أنه كان نورا في بطن أمه ايضا ما روى زكريا يحى ابن   عائذ   أنه  بقي  في  بطن  أمه   تسعة  أشهر  فلا  تشكو  وجعا     ولا مغضا ولا ريحا.

অর্থঃ-  “নবী  করীম   [ﷺ]  মায়ের  গর্ভেই  যে   নূর  ছিলেন-এর  দলীল হচ্ছে যাকারিয়ার বর্ণিত হাদীস”- নবী করীম [ﷺ] নয় মাস    মাতৃগর্ভে   ছিলেন,   এ  সময়ে  বিবি আমেনা  (رضي   الله عنها)  কোন  ব্যাথা বেদনা অনুভব  করেননি  বা বায়ু   আক্রান্ত হননি        এবং গর্ভবতী অন্যান্য মহিলাদের মত কোন  আলামতও  তাঁর  ছিলনা।  হুযুর  [ﷺ]-এঁর দেহ  যে  মাতৃগর্ভে নূর ছিল, এটাই তার প্রমান।



সৃষ্টির মূল উৎস নূরে মোহাম্মদী ঃ

 عَن جابر بن عَبدِ اللهِ قَالَ قُلْتُ يَارَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنتَ وَأَمِي أَخْبَرَنِي عَنْ أَوَّلِ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللهُ تَعَالَى قَبْلَ الْأَشْيَاءِ؟ قَالَ يَاجَابِرُ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَدْ خَلَقَ قَبْلَ الأشْيَاءِ نُورَ نَيَكَ مِنْ نُورِهِ فَجَعَل ذالك النور يَدُورُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللهُ تَعَالَى وَلَمْ يَكُنْ فِي ذَالِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلَا قَلَمْ وَلَا جَنَّةٌ وَلَا نَارٌ وَلَا مَلَكَ وَلَا سَمَاء وَلَا أَرْضٌ وَلَا شَمْسُ وَلَا قَمَرُ وَلَا حِقٌّ وَلَا إِنَّسٌ - فَلَمَّا أَرَادَ اللَّهُ تَعَالَى أَنْ يَخْلُقَ الْخَلْقَ قَسَّمَ ذَالِكَ التَّوْر اَرْبَعَة اجْزَاء فَخَلَقَ مِنَ الْجُزْءِ الْأَوَّلِ الْقَلَمَ وَمِنَ الثَّانِي اللُّوْحَ وَمِنْ الثَّالِثِ الْعَرْشَ ثُمَّ قَسَمَ الْجُزُءَ الرَّابِعَ أَرْبَعَةَ أَجْزَاءِ فَخَلَقَ مِنَ الأوّل حَمَلَةَ الْعَرْشِ وَمِنَ الثَّانِي الْكُرْسِيَّ وَمِنَ الثَالِثِ بَاقِيَ الْمَلَائِكَةِ ثُمَّ قَسَّمَ الرَّابِعَ أَرْبَعَةَ أَجْزَاءً فَخَلَقَ مِنَ الْأَوَّلِ السَّمَوَاتِ وَمِنَ الثَّانِي الْأَرْضِينَ وَمِنَ الثَّالِثِ الْجَنَّةَ وَالنَّار ... الخ .

হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবেদন করলাম, এয়া রসূলাল্লাহ! আমার মা-বাবা আপনার কদমে উৎসর্গিত, আপনি দয়া করে বলুন, সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তা'আলা কোন বস্তুটি সৃষ্টি করেছিলেন? নবীজী এরশাদ করলেন, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত কিছুর পূর্বে তোমার নবীর (আমার) নূরকেই তাঁরই নূর হতে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর ওই নূর আল্লাহ তা'আলারই মর্জি মুতাবেক তাঁরই কুদরতি শক্তিতে পরিভ্রমণ করতে লাগল। ওই সময় না ছিল লৌহ-কলম, না ছিল বেহেশত-দোযখ, আর ছিলনা আসমান যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানব ও দানব। এক পর্যায়ে মহান আল্লাহ্ যখন সৃষ্টিজগত পয়দা করার মনস্থ করলেন, প্রথমেই ওই নূর মুবারক চারভাগে বিভক্ত প্রথম অংশ দিয়ে কলম, দ্বিতীয় অংশ দিয়ে লওহ, তৃতীয় অংশ দিয়ে আংশ, সৃষ্টি করে চতুর্থাংশকে পুনরায় চারভাগে বিভক্ত করে প্রথমাংশ দিয়ে আরশবহনকারী ফেরেশতাদের, দ্বিতীয় অংশ দ্বারা কুরসী, তৃতীয় অংশ অন্যান্য ফেরেশতাদের সৃষ্টি করে চতুর্থাংশকে আবারও চারভাগে বিভক্ত করে। প্রথম ভাগ দিয়ে সপ্ত আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে সপ্ত যমীন, তৃতীয় দিয়ে বেহেস্ত-দোযখ এবং পরবর্তী ভাগ দিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন।


উৎস ঃ
| ইমাম কুন্তলানী : আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া, ১ম খণ্ড, ৭১ পৃষ্ঠা। ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহিব, ১ম খণ্ড, ৮৯-৯১ পৃষ্ঠা। হালভী : আসিরাতুল হালভিয়া, ১ম খন্ড, ৫০ পৃষ্ঠা। আল্লামা আজলুনী : কাশফুল খেফা, ১ম খন্ড, ৩১১ পৃষ্ঠা শায়খ আবদুর রায্যাক : ‘আল মুসান্নাফ’। ড. তাহেরুল কাদেরী : খাছাইছে মুস্তফা। নাবহানী : আল আনওয়ারুল মুহাম্মদিয়া ১৩ পৃষ্ঠা, ইস্তাম্বুল থেকে প্রকাশিত। ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সালাতুস

হাদীসের বর্ণনাকারী

হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু। নবীপ্রেমে উৎসর্গিত এক তরুণ সাহাবী। মাত্র আঠার বৎসর বয়সে দ্বিতীয় আকাবায় ইসলামের সমবেত হন কম বয়সের কারণে বদর-উহুদের জিহাদে শরিক হতে না পারলেও পরবর্তীতে প্রায় ১০ জিহাদে অংশগ্রহণ করে বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। মদীনার মসজিদে নবভী হতে এক মাইল দূরে তাঁর বাসস্থান হওয়া সত্ত্বেও পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে নবভীতেই জামা'আত সহকারে নিয়মিত আদায় করতেন। ঐতিহাসিক খন্দকের যুদ্ধে অবিরাম পরিশ্রম আর উপবাসের কারণে মুসলিম সৈন্যদের অবস্থা একেবারে কাহিল। এমনকি নবীজীর পবিত্র পেট মুবারকেও পাথর বাঁধা দেখে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিজেকে আর সামলাতে না পেরে বিদ্যুৎবেগে দৌঁড়ে ঘরে পৌঁছে বিবির কাছে জানতে পারলেন সামান্য আটা আর একটি ছোট ছাগলছানা ছাড়া আর কিছুই নেই। বিবিকে নির্দেশ দিলেন ঠিক আছে এই ছাগলছানা জবাই করে রান্না কর; আর যৎসামান্য আটা যা-ই রয়েছে তা দিয়ে রুটি তৈরি কর, আমি হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত দিয়ে আসি। এ কথা বলে আরেক দৌঁড়ে নবী করীমের খেদমতে এসে একেবারে কাছে গিয়ে কানে কানে দাওয়াতটা দিলেন এবং জানিয়ে দিলেন নবী পাক সাথে যারা যাবেন তাঁদের সংখ্যা যেন দশজন অতিক্রম না করে। দাওয়াত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবীজী সৈন্যবাহিনীর কাছে ঘোষণা দিলেন। সবাই জাবেরের বাড়িতে যাব। সেখানে খাবারের আয়োজন হয়েছে। নবী করীমের এই আম ঘোষণা শুনে হযরত জাবির রদিয়াল্লাহু আনহুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন। ছোট একটা বকরির বাচ্চা দিয়ে দশজনের বেশি খাওয়া কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে এ লোককে নবী করীম দাওয়াত দিয়ে দিলেন। কিন্তু আপত্তি-অভিযোগ করার কোন সাহস ছিল না। তবে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল নবীর দরবারে কোন অভাব নেই। ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে। নিশ্চয়। এ চিন্তা করতে করতে নবী করীম সেনা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে তাঁর ঘরে এসে হাযির হলেন। এরপর সামান্য আটা যা ছিল তার উপর এবং বকরির রান্না করা গোশ্ত ও হাঁড়ির মধ্যে থুথু মুবারক নিক্ষেপ করলেন। তারপর খাবার পরিবেশন শুরু হল। নবী পাকের পবিত্র থুথু মুবারকের ওসীলায় খাবারের এতই বরকত হয়ে গেল যে, পর্যায়ক্রমে সেখান থেকে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত লোককে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ানোর পরও প্রথম অবস্থায় খাবার যা ছিল তাই রয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ্।।



হাদীসের ব্যাখ্যা গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ করলে দেখা যায়, পবিত্র কোরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি সূরার প্রতিটি আয়াতে কোননা কোনভাবেই আমাদের প্রিয়নবী হুযুরপুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা বর্ণিত হয়েছে। দুনিয়ার অন্য কোন টির সাথে তাঁর তুলনা হয় না। কারণ, তিনি সৃষ্টির মূল আর অন্যরা তাঁরই শাখাপ্রশাখা। তিনিই আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি এবং আল্লাহর দরবারে প্রথম আত্মসমর্পণকারী। যেমন চিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে-

قُلْ إِنَّ صَلَوَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَانِي وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ . لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَالِكَ أُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ

অর্থাৎ হে নবী! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামায, হজ্ব, কোরবানী, আমার জীবন ও ওফাত বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই; যার কোন শরীক নেই। এবং এ বিষয়ে আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং প্রথম (আল্লাহর দরবারে আত্মনিবেদনকারী)। | সূরা আন'আম, আ. ১৬২-১৬৩।

 আলোচ্য আয়াতের শেষের অংশ আমিই প্রথম মুসলমান' থেকে বুঝা যায়, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই আল্লাহর দরবারে প্রথম আত্মসমর্পণকারী এমনকি আদিপিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামের আগেও। শুধু তাই নয় মানবজাতির আগে জিনজাতির যারা আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণকারী ছিল তাদেরও পূর্বে। এমনকি ফেরেশতাদেরও পূর্বে। সৃষ্টিজগতের সকল সৃষ্টিই আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণকারী ছিল। কেউ আগে আবার কেউ পরে। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ বাধ্য হয়ে। যেমন এরশাদ হয়েছে।


وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِى السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَ كَرُهَا وَإِلَيْهِ يَرْجِعُونَ 

অর্থাৎ আসমান-যমীনে যা কিছু রয়েছে সকলই স্বেচ্ছায় হোক কিংবা বাধ্য হয়ে, তারই কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাঁরই প্রতি সকলই প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা আলে ইমরান, ।

 কাজেই সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণকারী হলেন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সুতরাং তিনিই সর্বপ্রথম সৃষ্টি। এভাবে পবিত্র ক্বোরআনের অনেক আয়াত রয়েছে যদ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনুধাবন করা যায়, নবী করীম সৃষ্টির মূল উৎস ছিলেন এবং তাঁরই পবিত্র নূর হতে অন্যান্য জগত সৃজিত, যা হাদীস শরীফের ভাষ্য দ্বারা প্রতিভাত তেমনি অপর এক হাদীস শরীফে রয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

كُنتُ اَوَّلُ النَّبِينَ فِي الْخَلْقِ 

অর্থাৎ আমি সৃষ্টিগতভাবে প্রথম নবী আর দুনিয়াতে আগমনের দিক দিয়ে শেষ নবী। দাইলামী আল ফেরদাউস, ৩য় খন্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা; ইবনে কাসীর ভাষানারুল কোরআন আল আযীম, ৩য় খন্ড, ৪৭০ পৃষ্ঠা 


হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

كُنتُ نُورًا بَيْنَ يَدَى رَبِّي قَبْلَ خَلْقِ ادَمَ عَلَيْهِ الصَّلَوةُ

وَالسَّلَامُ بِأَرْبَعَةِ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির চৌদ্দহাজার বৎসর পূর্বে আমি আমার রবের দরবারে নূরের আকৃতিতে মওজুদ ছিলাম।



কুন্তলানী : আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়া; আজলানী : কাশফুল খেফা, ২য় খন্ড, ১৭০ আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস শরীফ স্বীয় প্রসিদ্ধ কিতাব 'সিরাতে হালাবিয়া'য় সঙ্কলন করেন-

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ انَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَألَ جِبْرَائِيلَ عَلَيْهِ السَّلام فَقَالَ يَا جِبْرَئِيلُ كَمْ عَمَرُكَ مِنَ السِّنِينَ ؟ فَقَالَ يَارَسُوْلَ اللهِ لَسْتُ أَعْلَمُ غَيْرَ اَنَّ فِى الْحِجَابِ الرَّابِعِ ، يَطْلَعُ فِى كُلَّ سَبْعِينَ سَنَةٍ مَرَّةً رَأَيْتُهُ اثْنَيْنِ وَسَبْعِينَ أَلْفَ مَرَّة - فَقَالَ يَا جِبْرَئِيلُ وَعِزَّةِ رَبِّي جَلَّ جَلالُهُ أَنَا ذَالِكَ الْكَوْكَبُ .



অর্থাৎ হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালামকে করলেন- ওহে জিব্রাঈল! আপনার বয়স কত? উত্তরে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, এয়া রসূলাল্লাহ! আমি তাতো সঠিক জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি। (সৃষ্টিজগত সৃষ্টির পূর্বে) আল্লাহ্ তা'আলার নূরানী আযমতের পর্দাসমূহের চতুর্থ পর্দায় একটি নূরানী তারকা সত্তর হাজার বছর পর পর উদিত হত। আমি আমার জীবনে সেই নূরানী তারকা বাহাত্তর হাজার বার দেখেছি। অতঃপর নবীপাক এরশাদ করলেন, মহান রব্বুল আলামীনের ইয্যাতের সম করে বলছি, সেই অত্যুজ্জ্বল নূরানী তারকা আমিই ছিলাম। আল হালতী : আস সীরাতুল হালভিয়া, ১ম খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা।। উপরিউক্ত কোরআন-হাদীসের আলোচনা থেকেই বুঝা গেল রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টির মূল উৎস। এরপরেও একশ্রেণীর লোক বলে বেড়ায় নবী আমাদের মত সাধারণ মানুষ, মাটির তৈরি মানুষ, দোষে-গুণে মানুষ, তিনি অতিমানব নন, না নূরের তৈরি ইত্যাদি। [গোলাম আযম : সিরাতুন নবী সঙ্কলণ।। আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয়হাবীবকে এমন অসংখ্য নূরানী ও অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা অন্য মানুষতো দূরের কথা অন্য নবীকেও দেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি তন্মধ্যে অন্যতম। কাজেই হাদীস শরীফের ভাষ্যমতে নবী করীমের নূর মুবারক তখনই সৃষ্টি করা হয়েছিল যখন মাটিতো দূরের কথা আরশ, কুরসী, লওহ, কলম তথা সৃষ্টিকূলের কোন কিছুই সৃষ্টি করা হয়নি। সুতরাং কীভাবে এ কথা তারা বলার দুঃসাহস দেখায়, নবী আমাদের মত মাটির তৈরি? (গোলাম আযম : সিরাতুন নবী সঙ্কলণ! তারা বলে নবী আমাদের মত। কারণ, তিনি খাবার খেয়েছেন, বাজার করেছেন, সংসার করেছেন ইত্যাদি। তাহলে আমরা বলব এ যুক্তি তো কাফিরদেরই। পবিত্র ক্বোরআনে এসেছে কাফিররা নবী করীমের উপর ঈমান না আনার জন্য এ হেন খোড়া যুক্তি প্রদর্শন করেছিল, jus তা। অর্থাৎ “এ রসূলের কী হয়েছে (ইনি কিভাবে রসূল হতে পারেন) যিনি খাবার খান এবং বাজারে চলাফেরা করেন।” সুতরাং কাফিরদের কথার সাথে সূর মিলিয়ে কেউ যদি নিজেদেরকে দলভুক্ত করে চায় আমাদের করার কী আছে?

তারা বলে বেড়ায় নবী কিভাবে নূরের তৈরি, তিনিতো আমাদের মত গড়া মানুষ। তাহলে আমরা বলব সহীহ হাদীস শরীফে দেখা যায়, নবী পাকের পবিত্র দেহ মুবারকে কোন দিন মশা মাছি বসেনি; অথবা সুযোগ পেলেই মশা-মাছি আমাদের শরীরের রক্ত টেনে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। নবী পাকের নূরানী দেহ আর আমাদের দেহ কোন দিন এক হতে পারে না। সাধারণ মানুষ মারা। মারা যাওয়ার পর কবরে তাদের দেহ মাটির সাথে মিশে যায়। কিন্তু নবীগণের দেহ মোবারক কবরের মাটিতে বিলীন হয় না। আর আমাদের নবীর শানতো অনেক উর্ধ্বে। হাদীস পাকে এসেছে,

إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُل أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاء অর্থাৎ- নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক (ইন্তিকালের পর) নবীগণের দেহ মুবারক খাওয়া মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।ফিদিস সালাওয়াত। |

 তারা বলে আমাদের যেমন শরীরে রক্ত আছে নবীর শরীরেও রক্ত ছিল তিনি কি আমাদের মত নন? বড় দুঃখের সাথে লক্ষ করছি আমরা নবীর উম্মত হয়ে এই এক শ্রেণীর লোক ছলে-বলে- কৌশলে চাচ্ছে যে, নবী তাদের মতই হোক, আর তারা নবীর মত হয়ে যাক (নাঊযুবিল্লাহ)।

তাহলে আমরা তাদের প্রত্যেকের কাছে জানতে চাই, তুমি কি জান তোমার রক্ত নাপাক, খাওয়াতো দূরের কথা কারো গায়ে লাগলেও ধুয়ে ফেলা আবশ্যক? কিন্তু নবী পাকের রক্ত মুবারক নাপাক ছিল বলে শরীয়তের কোন প্রমাণ দেখাতে পারবেন কি? বরং নবী করীমের রক্ত মুবারকের পবিত্রতার উপর অসংখ্য হাদীস শরীফ বিদ্যমান। ঐতিহাসিক উহুদ যুদ্ধে নবী করীমের দাঁত মুবারক শহীদ হওয়ার পর মুখ দিয়ে যখন রক্ত ঝরে পড়ছিল তখন সাহাবীরা গিয়ে হাত বসিয়ে দিয়েছিলেন এবং এক বিন্দু রক্তও পড়তে দেননি। নবীজী ওই রক্ত মুবারক হিফাযত করার জন্য সাহাবী হযরত মালিক ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে কেউ না পায়। যুদ্ধের মাঠে নবী করীমের সেই রক্ত মুবারক হিফাযতের এমন কোন জায়গা খুঁজে পেলেন না। যেখানে কেউ দেখবে না। পরিশেষে বুদ্ধি করে চুমুক দিয়ে রক্তের সবটুকুই পান করে নিলেন। পরবর্তীতে নবী করীম ওই রক্ত মুবারকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন, হুযূর এমন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছি যেখানে দুনিয়ার কোন মানুষ দেখতে পাবে না। নবী করীম জায়গাটির কথা জানতে চাইলেন। উত্তরে বললেন, হুযূর সেই নূরানী রক্ত মুবারক দুনিয়ার কোথাও রাখা আমার পছন্দ হয়নি তাই আমি তা নিজেই পান করেছি। প্রেমিক সাহাবীর এ ধরনের মুহাব্বত দেখে নবী করীম মুচকি হাসলেন আর সুসংবাদ দিলেন, যে পেটে আমার রক্ত পৌঁছেছে সে পেটকে কোনদিন জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।

ওহাবী খারেজী, দেওবন্দী, কাদিয়ানী, মওদূদীবাদের অনুসারীরা কি কোন দিন। প্রমাণ করতে পারবে- তাদের রক্ত পবিত্র এবং সেই রক্ত পানে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদ দিতে পারবে? তাহলে কেন ওই সব শয়তানী যুক্তি দিয়ে


সরলপ্রাণ মুসলিম মিল্লাতকে গোমরাহ করা হচ্ছে ? আসলে নবী পাকের শান-মান শুনলে ঈমানদারের ঈমান মজবুত হয় আর শয়তানের মন হয়ে যায় দুঃখ ভারাক্রান্ত। যারা নবীপাকের সুউচ্চ শান-মান সহা করতে পারে না, তারা শয়তানের প্রেতাত্মা নয় কি? ঈমানদার সব সময় ক্বোরআন-হাদীসের আলোকেই কথা বলবে। কোন যুক্তি তার সামনে টিকে থাকতে পারে না। মহান আল্লাহ যেখানে তাঁর প্রিয় নবীর শান ও মান-মর্যাদাকে বুলন্দ করেছেন সেক্ষেত্রে নবীর দুশমনেরা হাজার চেষ্টা করলেও কোন কাজ হবে না।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর মাসে নবীপ্রেমিকরা উজ্জীবিত হয়, নব উদ্যমে তাঁদের মুখে মুখে থাকে প্রিয়নবীর প্রশংসাগীত। 

তিনিই আল্লাহর নূর, তিনিই সমস্ত সৃষ্টির রহমত এবং তিনিই মূল উৎস।
নবী মোর নূরে খোদা, তাঁরই তরে সকল পয়দা আদমের কলবেতে তাঁরই নূরের রৌশনী।।

নবীর মোর পরশমণি।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!