খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রঃ) এর জীবনী part 2

Muhammad Jamal Uddin
0
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রঃ) এর জীবনী part 2

মুহাম্মদ ঘোরীর প্রতি স্বপ্নাদেশ ঃ

শেহাবুদ্দীন মুহাম্মদ ঘোরী তাহার হিন্দুস্তান আক্রমণের ব্যর্থতার কথা কখনও ভুলিতে পারেন নাই। প্রতিশোধের আগুন তাহার অন্তরে দাউ দাউ করিয়া জ্বলিতেছিল । একদা গভীর রাতে নিদ্রা মাঝে মুহাম্মদ ঘোরী স্বপ্নে দেখিলেন শুভ্র পোশাক পরিহিত একজন বোযর্গ সিংহাসনে বসিয়া আছেন। তাঁহার দেহ ইহাতে উজ্জ্বল নূরের দীপ্তি প্রকাশ পাইতেছে। ভাবগম্ভীর পরিবেশে খাদেমগণ তাঁহার আদেশের প্রতীক্ষায় রহিয়াছে। একজন খাদেম তাহাকে মুসলিম সৈন্যদের মাঝে নিয়া হাজির করিলে উক্ত বোযর্গ বলিলেন, “যাও! তোমাকে আমি হিন্দুস্তানের কর্তৃত্ব দিলাম।”এইরূপ অপূর্ব স্বপ্ন দর্শন করিয়া মুহাম্মদ ঘোরী নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠিলেন। ভোরবেলা তিনি পরিষদবর্গ ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছে তিনি স্বপ্ন বৃত্তান্ত বর্ণনা করিলেন। তাহারা সকলে তাহাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিয়া বলিলেন, জাঁহাপনা! যতদূর মনে হয়, অচিরেই হিন্দুস্তান আপনার দখলে আসিবে।

বর্ণিত আছে যে, যেদিন খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) পৃথ্বিরায়ের ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে অভিশাপ দিয়াছিলেন, সেইদিন রাত্রেই খাজা সাহেব স্বপ্নযোগে মুহাম্মদ ঘোরীকে হিন্দুস্তান আক্রমণের আদেশ দিয়াছিলেন । মুহাম্মদ ঘোরী স্বপ্নাদেশকে বাস্তব সত্য বলিয়া মানিয়া লইয়া তাহার ক্ষুদ্র শক্তি লইয়া বিরাট শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান চালনা করা স্থির করিলেন ।মুহাম্মদ ঘোরীর পুনরায় হিন্দুস্তান আক্রমণ করিলেন। ৫৮৮ হিজরী সনে মুহাম্মদ ঘোরী পুনরায় হিন্দুস্তান আক্রমণ করিলেন। রাজা পৃথ্বিরায় বাহিনী লইয়া তাঁহার পথ রোধ করিয়া দাঁড়াইলেন। রাজপুত্র পৃথ্বিরায়ের সাহায্যে আগাইয়া আসিলেন।মুহাম্মদ ঘোরী আল্লাহ পাকের উপর পূর্ণ ভরসা করিয়া এই সম্মিলিত বিরাট বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁহার ক্ষুদ্র সৈন্যদলকে আক্রমণের আদেশ দিলেন। মুসলিম বাহিনী আল্লাহ আকবর রবে বজ্রনাদে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঝাঁপাইয়া পড়িলেন। আল্লাহ পাকের কি অপূর্ব মহিমা, মুহাম্মদ ঘোরীর এই ক্ষুদ্র বাহিনীর নিকট রাজা পৃথ্বিরায়ের বিরাট বাহিনী অল্প সময়ের মধ্যেই পরাজয় বরণ করিল। যুদ্ধে অনেক রাজপুত রাজা যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিম সৈন্যদের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিল । রাজা পৃথ্বিরায় যুদ্ধ ক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিয়া গঙ্গা পার হইবার মুসলিম বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। অতঃপর তাহাকে বন্দী অবস্থায় মুহাম্মদ ঘোরীর দরবারে হাজীর করা হইল । তিনি পৃথ্বিরায়ের জীবন প্রদীপ চিরতরে নির্বাপিত করিয়া দিলেন। হিন্দুস্তান মুসলমানদের অধীকারে আসিল। এইভাবে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব সত্যে পরিণত হইল ।

হিন্দুস্তানে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম ঃ
যুদ্ধ জয়ের পর মুহাম্মদ ঘোরী ভাবিলেন যে মহামানবের স্বপ্নাদেশ এবং দোয়ার বরকতে এইরূপ অসম্ভব কার্য সম্ভব হইয়াছে। তাঁহার সহিত এই মুহূর্তে দেখা করা কর্তব্য। অতএব তিনি কালবিলম্ব না করিয়া খাজা সাহেবের দরবারে হাজির হইলেন । সেই দিনটি ছিল শুক্রবার। মুহাম্মদ ঘোরী খাজা সাহেবের সাথে জুমার নামায আদায় করিলেন। অতঃপর খাজা সাহেব তাঁহাকে অনেক উপদেশ এবং পরামর্শ দান করিলেন । তিনি তিন দিন খাজা সাহেবের দরবারে অবস্থান করিলেন । রাজা পৃথ্বিরায়কে পরাজিত করিয়া মুহাম্মদ ঘোরী আরও উৎসাহিত হইয়া উঠিলেন। সমগ্র হিন্দুস্তানে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করিবার জন্য তিনি উদগ্রীব হুইয়া উঠিলেন। সামানা, সুমূর্তি, কাহরম, হাঁসী, আজমীর প্রভৃতি স্থান তিনি দখল করিলেন। অতঃপর ইহার দুই বৎসর পর তিনি কৌনোজ আক্রমণ করিলেন । কৌনোজ রাজ জয়চাদ তাহার সমস্ত শক্তি নিয়া মুহাম্মদ ঘোরীকে বাধা দিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ বাহিনীর নিকট তাহাকে শোচনীয় পরাজয় বরণ করিতে হইল । । ইহার পর কুতুবুদ্দীন আইবেক বেনারস দখল করিয়া হিন্দুস্তানের অবশিষ্ট অংশটুকুও মুসলিম শাসনের আওতাভুক্ত করিলেন। এইভাবে সমগ্র হিন্দুস্তানে ইমলামি শাসনতন্ত্র কায়েম হইল ।

হিন্দুস্তানে খাজা সাহেবের সম্মান ঃ
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ)-এর দোয়ায় মুহাম্মদ ঘোরীর হিন্দুস্তান বিজয় এবং হিন্দুস্তানে মুসলিম শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) 'সম্মান ও প্রতিপত্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পাইল। সকলেই তাঁহাকে শ্রদ্ধা করিতে লাগিল । দলে দলে লোক তাঁহার দরবারে আসিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিতে লাগিল । অমুসলিমগণও তাঁহাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করিতে লাগিল । হিন্দুস্তানের শাসনকর্তা কুতুবুদ্দীন আইবেক প্রায়ই খাজা সাহেবের দরবারে উপস্থিত হইয়া জটিল সমস্যা সম্পর্কে মূল্যবান পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। রস্তুত পক্ষে সিংহাসনে আরোহণ না করিয়াও খাজা সাহেব হিন্দুস্তানের একচ্ছত্র অধিপতি হইয়া রহিলেন। তিনি ক্ষমতার সিংহাসন রচনা করেন নই। তিনি রচনা করেন এমন এক সিংহাসন যার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইয়াছিল মানুষের মনে এবং উহার ধারক ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন!' তাই তিনি যুগ যুগ ধরিয়া মানুষের ভক্তির অপূর্ব পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে। যুগ যুগ পরে আজও লক্ষ লক্ষ দেশ -বিদেশ হইতে তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ জেয়ারত এবং ভক্তির অর্থ নিবেদন করিতে আসেন।

খাজা সাহেবের শুভ-বিবাহ ঃ
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) পূর্ণ জীবনটাই জেহাদ ও ইসলাম প্রচার কার্যে ব্যয়িত হইয়াছে। কর্ম জীবনের এই একনিষ্ঠ সাধনার মধ্যে তিনি কখনও নিজের সম্পর্কে চিন্তা করিবার অবসর পান নাই। বিবাহ-শাদী, ঘর-সংসার এসব ছিল তাহার কল্পনার বাইরে। কিন্তু একদা একটি ঘটনা ঘটিল-গভীর রাত্রে নিদ্রা মাঝে খাজা সাহেব স্বপ্নে দেখিলেন, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (স) তাঁহাকে নির্দেশ দিতেছেন- “মুঈনুদ্দীন। তুমি আমার দ্বীনের সাহায্যকারী বটে কিন্তু আমার একটি সুন্নত তুমি এখনও পালন কর নাই। উহাকে তুমি একেবারেই পরিত্যাগ করিয়াছ। স্বপ্ন দেখিয়া খাজা সাহেব ভাবনায় পড়িয়া গেলেন। অবশেষে বুঝিতে পারিলেন, তিনি বিবাহ করেন নাই। বিবাহ রাসূলুল্লাহ (স)-এর রীতি। বিবাহ না করিয়া অবলম্বন করিবার আদেশ ইসলামে নাই ।

খাজা সাহেব চিন্তায় পড়িয়া গেলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁহার নিকট কে মেয়ে বিবাহ দিবে। কেননা ইতিমধ্যেই জীবনের নব্বই বৎসর তাঁহার অতিক্রান্ত হইয়া গিয়াছে। এই বয়সে কোন বৃদ্ধের নিকট কোন পিতা জানিয়া শুনিয়া কন্যা দান না। জীবনের যে কঠোর ও সাধনার পথ তিনি বাছিয়া নিয়াছিলেন, তাহাতে ঘর সংসারের কথা চিন্তা করাও তাঁহার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবুও রাসূলুল্লাহর (সাঃ) আদেশ পালনের তাকীদে তিনি নিশ্চুপ থাকিতে পারিলেন না। তিনি বিবাহের এরাদা নিয়া আল্লাহর উপর ভরসা করিয়া রহিলেন। পটলীদূর্গের শাসনকর্তা মালিক খাত্তাব খাজা সাহেবের মুরীদ ছিলেন। দূর্গের পার্শ্ববর্তী এলাকার সামস্ত রাজারা ছিল অমুসলিম। ইহারা ভীষণ মুসলিম বিদ্বেষী ছিল। অমুসলিম সামন্ত রাজারা যে কোন সময়ে দুর্গ আক্রমণ করিতে পারে, এই আশংকায় মালিক খাত্তাব নিকটস্থ সামন্ত রাজার রাজ্য আক্রমণ করিলেন। যুদ্ধে রাজার পরাজয় ঘটে এবং সামন্ত রাজার কন্যা খাত্তাব বাহিনীর হাতে বন্দী হন। মানিক খাতার সামন্ত রাজার কন্যাকে খাজা চিশতীর (রহঃ) খেদমতে বাদী হিসাবে প্রেরণ করেন। কিন্তু খাজা সাহেব তাহাকে বাদী হিসাবে গ্রহণ না করিয়া, তাহাকে সহধর্মিনীর মর্যাদা দিয়া বরণ করিয়া লইলেন। অতঃপর এক শুভ লগনে খাজা সম্পন্ন হইল ।

 খাজা সাহেবের সন্তান সন্ততি ঃ
খাজা সাহেবের কোন সন্তান সন্ততি ছিল কিনা সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে দ্বিমত রহিয়াছে। কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে তাঁহার কোন সন্তান ছিলনা। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে সন্তান সম্ভূতি ছিল। তাঁহার তিন পুত্র এবং এক কন্যা ছিল । পুত্রদের নাম ছিল- (১) আৰু সাইদ খাজা ফকরুদ্দীন (২ আবুল খায়ের জিয়াউদ্দীন (৩) শায়েখ হুচ্ছামুদ্দীন। আর কন্যা সন্তানের নাম ছিল বিবি হাফেজ জামাল। খাজা ফকরুদ্দীন একজন বুর্যুগ ও কামেল ওলী ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি ত্রিশ বৎসর জীবিত ছিলেন। তাঁহার দ্বারাই খাজা সাহেবের বংশ বিস্তার লাভ করে। শায়েখ হুচ্ছামুদ্দীন (রহঃ) একজন কামেল ওলী ছিলেন। তাঁহার অলৌকিক ক্ষমতা সর্বজ্ঞাত ছিল। বাংলাদেশের সাভারে এখনও তাঁহার মাযার বিদ্যমান আছে। বিবি হাফেজ জামাল নামে খাজা সাহেবের একটি কন্যা সন্তান ছিল। খাজ সাহেব নিজেই তাঁহাকে শিক্ষা দান করিয়াছিলেন। বিখ্যাত অলী শায়েখ রাযী (রহঃ ছিলেন তাঁহার স্বামী। বোযর্গ পিতার শিক্ষা ও সান্নিধ্যের ফলে বিবি হাফেজ জামাল কামালিয়াতের উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়াছিলেন 

খাজা সাহেবের সাধনা ঃ
'এই জগতে যত বড় বড় মহাপুরুষ চরম উৎকর্ষ সাধন করিয়াছিলেন। তাঁহার সকলেই বড় বড় ছিলেন। সাধনা বলেই তাহারা কামালিয়াতের চরম শিখরে পৌঁছিয়াছিলেন। খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) বিশেষত্ব ছিল তাঁহার সাধনায়। কৈশোরে হযরত ইব্রাহীম কানদুষী (রহঃ) প্রদত্ত রুটির টুকরাটি ভক্ষণ করার পর সাধনা জগতে বিচরণের যে উম্মত আকাঙ্খা তাঁহাকে পাইয়া বসিযঅছিল, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাহা কখনও নিবৃত্ত হয় নাই। আত্যাধিক পরিশ্রম অসহনীয় কষ্ট ও অবর্ণনীয় ত্যাগ স্বীকার করিয়া তিনি এই জগতে বিচরণ করিয়াছিলেন ।হযরত খাজা কুতবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর (রহঃ) বর্ণনায় জানা যায় খাজা সাহেব মাশ্চর্যজনক রিয়াজত সাধনা করিতেন। বৎসরের অধিকাংশ সময় তিনি রোযা। রাখিতেন। কখনও কখনও তিনি সপ্তাহকাল ধরিয়াও কিছু ভক্ষণ করিতেন না। তিনি সব সময় ওযু অবস্থায় থাকিতেন। বর্ণিত আছে খাজা সাহেব একাধারে সত্তর বৎসর পর্যন্ত এশার নামাজের ওযু দিয়া ফজরের নামায আদায় করিয়াছেন। দিনের বেলা প্রায়ই তিনি রোযা রাখিতেন। রাতের বেলা সারারাত জাগিয়া। এবাদত করিতেন ও পবিত্র কোরআন এবং ওযীফা তেলাওয়াত করিতেন। তিনি যখন ভাবসাগরে ডুবিয়া থাকিতেন তখন বাস্তব জগতের কোন খেয়ালই তাঁহার থাকিত না ।

খাওয়া পরার জন্য খাজা সাহেবের কোন চিন্তাই ছিল না। ক্ষুধাকে তিনি সম্পূর্ণরূপে করিয়া নিয়াছিলেন। এফতার না করিয়া একাধারে সাত দিন পর্যন্ত রোযা রাখিলেও তিনি কষ্ট বোধ করিতেন না। দিনের পর দিন রোযা রাখার পর এফতারের নিয়াতে হয়ত শুকনা রুটির একটি টুকরা পানিতে ভিজাইয়া রাখিতেন এবং উহা দ্বারা ইফতার করিতেন। বর্ণিত খাজা সাহেব নিতান্ত সাধারণ আরবীয় পোশাক পরিধান করিতেন। উহা ছিঁড়িয়া গেলে তিনি নিজেই সেলাই করিয়া তালির পর তালি দিয়া তিনি উহা পরিধান করিতেন। খাজা সাহেব দয়া ক্ষমা ধৈর্য, ঔদার্য ইত্যাদি সকল প্রকার মহাগুণের অধিকারী ছিলেন। এক কথায় তাঁহার নাম ছিল 'দয়ার খাজা।' কেহ অপরাধ করিলে তিনি আগুনের মত গরম হইতেন, কিন্তু ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে সাথে আবার ফুলের মত কোমল হইয়া ক্ষমা প্রদর্শন করিতেন ।

 একদা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) কে হত্যা করিবার উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তি তাঁহার দরবারে আগমন করে। লোকটির হিংসা হইয়া ছিল যে, একজন বিদেশী, মুসলমান ফকীর কারামাত দেখাইয়া এই ভাবে খাজা সাহেবের প্রতি ব্যক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করিতে লাগিল। খাজা সাহেব অন্তদৃষ্টি বলে সবকিছু পূর্বাহ্নেই জানিতে পারিয়াছিলেন। তিনি ইচ্ছা করিলে এই কপট শত্রুকে মুহূর্তেই শেষ করিয়া ফেলিতে পারিতেন। কিন্তু তিনি তাহা না করিয়া অতি আদর করিয়া পরম যত্নে তাহাকে কাছে বসাইলেন । বলিলেন-বাবা! তুমি যেই উদ্দেশ্য নিয়া এত কষ্ট স্বীকার করিয়া আসিয়াছ তাহা গোপন করিয়া রাখিতেছ কেন? এই নাও আমি প্রস্তুত। তোমার কাজ শেষ করিয়া ফেল। শুনিয়া লোকটির অন্তর গলিয়া গেল। কিছুক্ষণ পর্যন্ত সে কোন কথাই বলিতে পারিল না। যে লোক অন্তদৃষ্টি বলে সবকিছু জানিয়া শত্রুকে এমনভাবে কাছে বসাইতে পারেন, যাহার মুখের কথা এত মধুময় চাঁহাকে হত্যা করে কাহার সাধ্য! লোকটি অতিশয় লজ্জিত ও অনুতপ্ত হইয়া তাহার কায়িত তরবারিখানা বাহির করিয়া খাজা সাহেবের পদপ্রান্তে রাখিয়া বলিল- জুর! আমাকে ক্ষমা করুন। আমি স্বীয় ইচ্ছায় আপনাকে হত্যা করিতে আসি নাই আমাকে প্রলোভন দিয়া এই কাজে বাধ্য করা হইছে। এই নিন তরবারি যত ইচ্ছা আমাকে শাস্তি দিন। খাজা সাহেব তাহাকে অতি সোহাগ ভরে কাছে বসাইয়া লিলেন, বাবা! ক্ষণিকের উত্তেজনায় মানুষ অনেক অপরাধ করিয়া বসে। ইহা ভুল । তামার সুমতি ফিরিয়া আসিয়াছে, ইহাই যথেষ্ট। তোমাকে শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছা আমার নাই । যাও তোমাকে আমি ক্ষমা করিয়া দিলাম। তুমি মুক্ত। আমার তরফ হইতে তোমার ভয়ের ।

হিন্দুস্তানে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম ঃ
যুদ্ধ জয়ের পর মুহাম্মদ ঘোরী ভাবিলেন যে মহামানবের স্বপ্নাদেশ এবং দোয়ার বরকতে এইরূপ অসম্ভব কার্য সম্ভব হইয়াছে। তাঁহার সহিত এই মুহূর্তে দেখা করা কর্তব্য। অতএব তিনি কালবিলম্ব না করিয়া খাজা সাহেবের দরবারে হাজির হইলেন । সেই দিনটি ছিল শুক্রবার। মুহাম্মদ ঘোরী খাজা সাহেবের সাথে জুমার নামায আদায় করিলেন। অতঃপর খাজা সাহেব তাঁহাকে অনেক উপদেশ এবং পরামর্শ দান করিলেন । তিনি তিন দিন খাজা সাহেবের দরবারে অবস্থান করিলেন । রাজা পৃথ্বিরায়কে পরাজিত করিয়া মুহাম্মদ ঘোরী আরও উৎসাহিত হইয়া উঠিলেন। সমগ্র হিন্দুস্তানে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করিবার জন্য তিনি উদগ্রীব হুইয়া উঠিলেন। সামানা, সুমূর্তি, কাহরম, হাঁসী, আজমীর প্রভৃতি স্থান তিনি দখল করিলেন। অতঃপর ইহার দুই বৎসর পর তিনি কৌনোজ আক্রমণ করিলেন । কৌনোজ রাজ জয়চাদ তাহার সমস্ত শক্তি নিয়া মুহাম্মদ ঘোরীকে বাধা দিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ বাহিনীর নিকট তাহাকে শোচনীয় পরাজয় বরণ করিতে হইল । । ইহার পর কুতুবুদ্দীন আইবেক বেনারস দখল করিয়া হিন্দুস্তানের অবশিষ্ট অংশটুকুও মুসলিম শাসনের আওতাভুক্ত করিলেন। এইভাবে সমগ্র হিন্দুস্তানে ইমলামি শাসনতন্ত্র কায়েম হইল ।

হিন্দুস্তানে খাজা সাহেবের সম্মান ঃ

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ)-এর দোয়ায় মুহাম্মদ ঘোরীর হিন্দুস্তান বিজয় এবং হিন্দুস্তানে মুসলিম শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) 'সম্মান ও প্রতিপত্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পাইল। সকলেই তাঁহাকে শ্রদ্ধা করিতে লাগিল । দলে দলে লোক তাঁহার দরবারে আসিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিতে লাগিল । অমুসলিমগণও তাঁহাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করিতে লাগিল । হিন্দুস্তানের শাসনকর্তা কুতুবুদ্দীন আইবেক প্রায়ই খাজা সাহেবের দরবারে উপস্থিত হইয়া জটিল সমস্যা সম্পর্কে মূল্যবান পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। রস্তুত পক্ষে সিংহাসনে আরোহণ না করিয়াও খাজা সাহেব হিন্দুস্তানের একচ্ছত্র অধিপতি হইয়া রহিলেন। তিনি ক্ষমতার সিংহাসন রচনা করেন নই। তিনি রচনা করেন এমন এক সিংহাসন যার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইয়াছিল মানুষের মনে এবং উহার ধারক ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন!' তাই তিনি যুগ যুগ ধরিয়া মানুষের ভক্তির অপূর্ব পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে। যুগ যুগ পরে আজও লক্ষ লক্ষ দেশ -বিদেশ হইতে তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ জেয়ারত এবং ভক্তির অর্থ নিবেদন করিতে আসেন।

খাজা সাহেবের কামালিয়াত ও বোযগী ঃ
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের বিনিময়ে যে মহারত্ন অর্জন করিয়াছিলেন তাহা ইতিপূর্বে কিঞ্চিত আলোচনা করা হইয়াছে। এখানে তাঁহার জীবনের বিশেষ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করিতেছি। ইহা হইতেই বোঝা যাইবে তিনি কত বড় কামেল বোযর্গ ছিলেন।
আছে আজমীরে ছাওরান নামে একটি কসবা ছিল। হামীদ নামক সুদৰ্শন যুবক সেখানে বসাবস করিত। ধনীর দুলাল বলিয়া সে একটু বেশী মাত্রায় উচ্ছৃঙ্খল হইয়া পড়িয়াছিল । সে কোন সুন্দরী যুবতীকে দেখিলে সে তাহার প্রতি আসক্ত হইয়া পড়িত এবং ছলে বলে কৌশলে তাহাকে বাগে আনিতে চেষ্টা করিত । তাহার একদল বন্ধু-বান্ধব ছিল তাহারা তাহাকে এই কাজে সাহায্য করিত এবং নিত্য নতুন যুবতি করিয়া দিয়া তাহার মনের সন্তুষ্টি বিধান করিত

ঘটনাক্রমে একদা এই যুবক কি এক কাজে হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)-এর দরবারে আগমন করে। খাজা সাহেব তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। সে দৃষ্টির তেজ তাহার অন্তরের সমস্ত পাপ কালিমা সে মুহূর্তেই ভস্মীভূত করিয়া দিল । বিগত দিনের অপরাধের কথা স্মরণ করিয়া সে খুবই অনুতপ্ত হইল। সে তখনই তওবা করিয়া খাজা সাহেবের নিকট থাকিয়া গেল । খাজা সাহেব তাহার প্রতি খাস তাওরাজ্জুহ প্রদান করিলেন । মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তাহার জীবনের রূপ বদলাইয়া গেল। চক্ষু খুলিয়া গেল, দেল রওশন হইল । আল্লাহ তায়ালা তাহাকে বেলায়েতের মর্যাদা দান করিলেন ।তৎকালে বাগদাদে হাকীম জিয়াউদ্দীন নামে একজন নামকরা দার্শনিক ছিলেন। তিনি দর্শনশাস্ত্রে একজন সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি তাসাউপে বিশ্বাস করিতেন না। তিনি বলিতেন ইহা কোন শাস্ত্রই নয়। উহা কতকগুলি বিকৃত মস্তিষ্ক লোকের মনগড়া কাহিনী মাত্র। যুক্তি বিজ্ঞানে উহা মূল্যহীন। ঘটনাক্রমে একদিন হাকীম সাহেব এই বাগানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন ।

সাহেবের খাদেম তখন কাবাব তৈরী করিতেছিল। হাকীম জিয়াউদ্দীনের খেয়াল হইল, তিনি এক টুকরা কাবাব চাহিয়া লইয়া ভক্ষণ করিবেন । খাজা সাহেব তখন নামায় পড়িতেছিলেন। নামায শেষে খাদেম তাঁহার সম্মুখে কাবাব হাজির। করিল। খাজা সাহেব উহাতে মাত্র একবার দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন, যাও এই কাবাবটুকু হাকীম সাহেবকে দিয়া আস । খাজা সাহেবের আদেশ পাইয়া খাদেম কাবাবসহ হাকীম সাহেবের নিকট গমন করিল । না চাহিতেই কাবাব পাওয়ায় হাকীম সাহেব খুশী হইলেন। খাজা সাহেবের মানবতা ও সৌজন্য দেখিয়া তিনি মুগ্ধ হইলেন। হাকীম সাহেবের যুক্তি বিজ্ঞানী ম কিছুতেই বুঝিতে পারে নাই যে, খাজা সাহেব তাহার অন্তরের সকল কথা জানিয় ফেলিয়া কাবাবরূপী ঔষধ তাহার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন হাকীম সাহেব অতিশয় আনন্দিত মনে কাবাবের একটি টুকরা মুখে পড়িলেন কিন্তু তাহার কেমন যেন মনে হইল। বিশ্ব-সভা তাহার নিকট ঘোলাটে হইয়া গেল। অসীম অন্ধকার তাহার চারিদিক ঘিরিয়া ফেলিল। তিনি অচেতন হইয়া পড়িলেন।

হাকীম সাহেবের অবস্থা দেখিয়া তাঁহার ভাব গম্ভীর মুখে সামান্য হাসির রেখা ফুটিয়া উঠিল। তিনি নিজ ভক্ষিত কাবাবের অবশিষ্টাংস তাঁহাকে মুখে পুড়িয়া দিলেন । হাকীম সাহেবের চেতনা ফিরিয়া আসিল। কিন্তু তখন হইতে তিনি আর দার্শনিক রহিলেন না। তাহার অন্তর হইতে যুক্তি বিজ্ঞানের সকল যুক্তিকতা দূর হইয়া গেল। তাহার সত্য সন্ধানী মন জাগিয়া উঠিল । মারেফাতে এলাহীর স্পর্শ তাহাকে সঞ্জীবিত করিয়া তুলিল। হাকীম সাহেব খাজা সাহেবের হাতে মুরীদ হইলেন। পরবর্তীকালে তিনি মারেফাতের সু-উচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়াছিলেন। মিয়াতুল আছরার কিতাবের বর্ণনায় জানা যায়, একবার খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) কোন এক মন্দিরের নিকট দিয়ে গমন করিতে ছিলেন। সাতজন ব্রাহ্মণ পূজারী সেখানে পূজা করিতেছিল। খাজা সাহেব তাহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন । পূজারীরাও তাঁহার দিকে তাকাইল। আর মুহূর্ত মধ্যেই কি এক অজানা আকর্ষণ পূজারীদিগকে অস্থির করিয়া তুলিল। পূজা ভুলিয়া গিয়া তাহারা খাজা সাহেবের নিকট গিয়া হাজির হইল । খাজা সাহেবের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এবং তাহার যাদুকরী বাণীর প্রভাবে ক্ষণিকের মধ্যে তাহারা আকৃষ্ট হইয়া ইসরাম ধর্ম গ্রহণ করিল । খাজা সাহেব তাহাদের নাম রাখিলেন, হামীদুদ্দীন বা দ্বীনের প্রশংসিত জন। পরবর্তীকালে ইহাদের সকলেই অলী আল্লাহ হইয়াছিলেন।

 ******খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) কিরূপ কামালিয়াত অর্জন করিয়া ছিলেন তাহা নিম্নের ঘটনা হইতেই বুঝিতে পারা যায়- ******

হযরত আবদুল কাদের জীলানী (রহঃ) হজ্জ করিতে গিয়াছেন, সঙ্গে হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) দুই বোযোর্গ একত্রে খোদার ঘর যেয়ারত করিয়া তাওয়াফ কার্য সমাধা করিলেন । তাওয়াফ শেষে হযরত আবদুল কাদের জীলানী সাহেব খাজা সাহেবের হাত ধরিয়া সোপর্দ করিলাম। সাথে জবাব আসিল, “আমি তাহাকে কবুল করিলাম।” অতঃপর তিনি খাজা সাহেবকে নিয়া তিনি মদীনা গমন রওজা শরীফে পৌঁছিয়া তিনি খাজা সাহেবকে বলিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সালাম দাও! হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) বলিলেন, আচ্ছালামু ইয়া রাসূলুল্লাহ।” সাথে সাথে রওজা পাক হইতে জবাব আসিল- “ওয়া আলাইকুমুচ্ছালাম ইয়া কুতুবাল মাশায়োখেল বারবি অল বাহির।” অর্থাৎ হে জল স্থলের পীর বোযর্গের কুতুব! তোমার প্রতি শান্তি নাযিল হইক । ইহা শুনিয়া মাহবুবে সোবাহনী হযরত আবদুল কাদের জীলানী (রহঃ) বলিলেন, মুঈনুদ্দীন! যাও! কাজ, শেষ হইয়াছে। তুমি কামালিয়াতের সর্বোচ্চ সোপানে পৌঁছিয়া গিয়াছ।

তাসাউফ সম্পর্কে খাজা সাহেবের বাণী ঃ
হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) বিভিন্ন সময়ে তাসাউফ সম্পর্কে যে সারগর্ভ বাণী প্রদান করিয়াছেন তাহা মারেফাত পন্থীদের কাছে আজও বিস্ময়ের বস্তু। অনেক সময় তিনি ভাবের আবেগে এমন সব কথা বলিতেন, যাহা একমাত্র আহলে দেল ব্যতীত আর কেহ বুঝিতে পারিত না। মা'রেফাত পন্থীদের জন্য ঐগুলি বিশেষ ফলদায়ক বলিয়া নিম্নে উহার কিঞ্চিত বর্ণনা করিতেছি।

*********************************সলুক***************************************

সলুক অর্থ পথ চলা, আল্লাহকে পাইবার আশায় সাধনার পথে ক্রমাগত অগ্রসর ওয়া। হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) বলেন, সলুকের প্রধান রাস্তা হইল শরীয়ত। সালেক যখন শরীয়তের উপর অটল থাকে এবং উহার সকল আদেশ- নিষেধ পূর্ণরূপে পালন করিতে সচেষ্ট হয়, তখন তরীকার পথ তাহার নিকট ক্রমশঃ স্পষ্ট হইয়া উঠিতে থাকে। অতঃপর সে যদি তরিকার সকল শর্ত ও সে সাথে শরীয়তের যাবতীয় আদেশ- নিষেধ দৃঢ়ভাবে পালন করিতে সক্ষম হয় তবে সে মারেফাতের রাস্তায় গিয়া পৌঁছায়। বেশ কিছুকাল এই রাস্তায় ভ্রমণ করিতে হয়। অনন্তর যখন উহাতে দৃঢ়তা জনো এবং উহার সকল বিধি-বিধান মানিয়া চলিবার ক্ষমতা হয় তখন সলুকের চতুর্থ স্তর অর্থাৎ হাকীকতের রাস্তা তাঁহার নিকট স্পষ্ট হইয়া উঠে। খাজা সাহেব বলেন, কিছু সংখ্যক বোযর্গের মতে সলুকের একশত স্তর বা সোপান রহিয়াছে। তন্মধ্যে সত্তরটি সোপান কাশফ ও কারামতের। কিন্তু চিশতীয়া তরীকার বোযর্গবৃন্দ সলুকের পনেরটি স্তর বর্ণনা করিয়াছেন। উহার মধ্যে কাশফ ও কারামতের স্থান পঞ্চম। এই স্তরটি অতিক্রম করিতে অনেক সাহস ও সাবধানতার প্রয়োজন। অন্যথায় সম্মুখের পথ অতিক্রম করা তাহার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এই স্তরে সালেককে পার্থিব সকল বস্তু এমনকি স্বীয় সত্ত্বাকেও ভুলিয়া যাইতে হয়। অন্যথায় সলুকের শেষ মঞ্জিল পর্যন্ত পৌঁছা তাহার সম্ভব নয়।

            ******************************মারেফাত********************************
সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণা করিয়া আল্লাহর বিশেষ বিশেষ সেফাতের পরিচয় লাভ করিবার সাধনাকেই মা'রেফাত বলা হয়। হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর (রহঃ) বলেন, সত্যিকার আরেফ সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি সমগ্র আলম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করিয়া উহার রহস্যাবলী বর্ণনা করিতে পারে এবং মুহব্বতের সকল জটিল প্রশ্নের জবাব দানে সক্ষম হয়। এই ব্যক্তি সর্বক্ষণ এশকের দরিয়ায় নিমজ্জিত থাকিয়া আল্লাহ পাকের কুদরত অবলোকন করিতে থাকে। তাহার উঠা, বসা, চলাফেরা সব কিছু একমাত্র মাহবুবে এলাহীর উদ্দেশ্যে হয়। জাগ্রত অবস্থায় হউক অথবা নিদ্রিত অবস্থায় হউক আল্লাহর যেকের তাহার অন্তরে সকল সময়ে জাগ্রত থাকে। আরেফগণ এইরূপ হালত প্ৰাপ্ত হন যে, তাঁহারা এক কদমে আরশে মোয়াল্লা হেজাবে আমত পর্যন্ত গমন করেন আবার দ্বিতীয় কদমে তাঁহার স্বস্থানে । কামালিয়াতের ইহাই নিম্নতম স্তর ।

আরেফের অন্তরে কোন কিছু ভাবের উদয় হইলে, তিনি উহা দূর করিয়া ফেলেন। তখন আল্লাহর যেকেরই তাহার অন্তরে বিরাজ করিতে থাকে। আল্লাহ তায়ালাও তাঁহার জন্য দানের দুয়ার উন্মুক্ত করিয়া দিতে কার্পণ্য করেন না । ফেকর আরেফের জিহ্বায় আর কোন শব্দই উচ্চারিত হয় না । প্রিয়তমের মুহব্বতে তিনি পার্থিব সকল কথা ও কাজ হইতে হাত গুটাইয়া লন অবশ্য আরেফের জন্য ইহা একটি মামুলী ব্যাপার। গুণ এই যে, 'তিনি সর্বদা নিশ্চুপ এবং বিমর্ষ থাকেন ।








Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!