নির্দ্বিধায়
সত্যের পক্ষে বলুনঃ
“ইয়া বুনাইয়া
আক্বিমিস সালাতা ওয়া,মুর বিল মা,রূফ ওয়ানহা আনিল মুনকার । ওয়াসবির আলা মা আসাবাকা ইন্না
যালিকা মিল আযমিল উমূর। “ [আল কুরআন]
ওয়া’মূর বিলমা’রূফ অর্থ হলো সৎ কাজের নিদের্শ দেওয়া। এবং সৎ পথে শক্ত মনোবল সুদৃঢ় উম্মতের সাথে থাকো। আপনি কি জানেন এটার মর্মাথ কি? এবং তা করতে হলে আপনাকে শক্ত ও সুদৃঢ় মনোবলের অধিকারী হতে হবে। এর অর্থ হলো আপনার সৎ কাজের আদেশ দেওয়া এবং সৎ কাজে চলা যদি কেই পছন্দ না করে এবং এই কারণে সে যদি আপনার উপর অসন্তুষ্ট হয় তাতে আপনার কিছু যায় আসবেনা। কারণ আপনি জানেন যে , আপনি সঠিক পথে আছেন। যেটা সম্পর্কে আপনি খুব ভাল করে জানেন যে এটাই সঠিক পথ। এটাকে যদি বাকি সবাই ভুল মনে করে তাতে ও আপনার কিছু যায় আসবেনা।
তারা আপনাকে অদ্ভুত মানুষ ভাবলেও এতেও আপনার কোন আপত্তি থাকবেনা।এবং
আপনি সঠিক পথে অবিচল থাকবেন।কে আপনার প্রতি ক্ষুদ্ধ হলো, কে আপনাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা
করলো ,কোন বন্ধু আপনাকে ত্যাগ করলো ,কেমন জনপ্রিয়তা আপনি হারিয়ে ফেললেন,কে আপনার প্রতি
রাগান্বিত হলো ইত্যাদি এই সব আপনার কাছে গুরূত্বপূর্ণ
মনে হবে না । কারণ যখন আপনি সালাতে দাড়ান,তখন আপনি শুধু আল্লাহকে ভয় করতে শিখেন। যখন
আমরা সালাতে দন্ডায়মান হয়, তখন আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে , এমন একটি দিন আসবে যে
দিন মানুষ কে কি ভেবেছিলো তা কোন কাজে আসবেনা । বিচার দিবসে একা আমাকে আল্লাহর সামনে
উপস্থিত হতে হবে।যদি আপনি এটা উপলব্ধি করতে
পারেন, তাহলে সবকিছু মোকাবেলা করার জন্য আপনি অনেক বেশি সাহসী হয়ে উঠবেন ।কারণ সবকিছুর
চেয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার দিনটাকে আপনি অনেক বেশি ভয় করবেন। অথবা আপনার মনোভাব
এমন হতে হবে যে, আল্লাহ যা সঠিক বলেছেন তা সবকিছুই সঠিক এবং যা অন্যায় বলেছেন তা সবকিছুই
অন্যায়। এটা বলতে আমার কোন সমস্যা নেই । আপনি যদি নিজেই ভাল কাজ না করেন, তাহলে আপনি
অন্যদের ভাল কাজের আদেশ দিতে পারবেন না।
ওযা’মূর বিল
মা’রূফ এর মধ্যে রয়েছে ওয়া’মূর নাফসাকা বিল
মা’রূফ এটা অন্তভুর্ক্ত । যেটার অর্থ হলো নিজেকে সৎ কাজের নিদের্শ দাও। অতঃপর
অন্যকে সৎ কাজের নিদের্শ দাও। নিজে সৎ পথে থাকুন এবং অন্যদের সৎ কাজের আদেশ দিয়ে তাদের
জীবনে পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। আর এটা হলো এই বিষয়ের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক। আমি খারাপ
কাজ করিনা এটা একটা বিষয় এবং অন্যদেরকে ভাল
কাজের আদেশ দেওয়া আরেকটি বিষয়।
আমরা এখন প্রচুর ব্যক্তিতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। এখানে মানুষ সবসময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্থ থাকে। সে ভাবে যে আমিতো সঠিক পথেই আছি। অন্যরা যদি জাহান্নামে যেতে চাই যাক, এটাকে স্বাগতম। আমি তাদের জীবনে নাক গলাবোনা । তারা কি করলো না করলো ,সেটা আমার দেখার বিষয় না । এমনটা ভাববেন না । অন্যরা কি করলো সেটা আপনার বিষয় না হলেও মাঝে মাঝে আপনাকে অন্যদের বিষয়ে নাক গলাতে হবে। অন্যদেরকে সৎ পথে ডাকতে হবে। পিতা পুত্রকে যে আদেশ বা উপদেশ দিয়েছিলেন সেটা পরবতীর্তে কুরআনে আল্লাহ কতৃর্ক দেওয়া আদেশে পরিণত হলো । তাই অবশ্যই আপনাকে সৎ কাজের আদেশ দিতে হবে , আপনাকে অবশ্যই সত্যের পক্ষে বলতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন-
‘’ মান র’আ মিনকুম মুনকারান ফাল ইউগায়্যিরু বিয়াদিহি ফাইন লাম ইয়াসতাতি ফাবিলিসানিহি ,ফাইন লাম ইয়াসতাতি ফাবিক্বলবিহি , ঝা’’লিকা দ্বা’ফুল ইমান’’ [হাদিস শরীফ]
তোমাদের মধ্যে কেউ কোন মন্দ কাজ দেখলে তা যেন হাত দ্বারা প্রতিহত করে। আর যদি সে তা করতে সমর্থ্য না হয় সে যেন তার মুখ দ্বারা প্রতিবাদ করে। যদি তাতেও সে সক্ষম না হয় তবে সে তার অন্তর থেকে ঘৃণা করে। আর এটা ইমানের সবনিম্ন স্তর। তাহলে আমরা এখানে দুটি জিনিস পেলাম।
১. সৎ কাজ করতে হবে।
২. সৎ কাজের আদেশ দিতে হবে ।
আর এটার সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটি বিষয় হলো “ওয়ানহা আনিল মুনকার” অসৎ কাজে নিষেধ করো বা অসৎ কাজে বাধাঁ দান করো। কোন কাজ যদি খারাপ হয়ে থাকে তাহলে সেটা যেই উৎযাপন করোকনা কেন ,সেটাকে যতো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হোক না কেন তাতে কিছুই যায় আসে না। যদি সেটা খারাপ কাজ হয় ,তাহরে সেটা খারাপ কাজই। যদি সেটা আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হয় তাহলে সেটা আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজই। সেটা যদি আল্লাহ মানুষকে যে স্বাভাবিক প্রকৃতির সাথে সৃষ্টি করেছেন তার বিপরীত কাজ হয় , তাহলে সেটা আল্লাহ মানুষকে যে পিতরাত দিয়েছেন তার বিপরীত কাজই। নৈতিকতা পরিবর্তন করা যায় না । দশ বছর আগের সমাজে যে সব কাজকে অগ্রহণযোগ্য ,যে সব কাজকে মন্দ মনে করা হতো , এখন হুবহো সে কাজ গুলো আর হুবহো সেই রকম নেই। সেগুলো পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। নৈতিকতা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো আগে অদ্ভুদ বরে বিবেচনা করা হতো , সে বিষয় গুলো এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। আর কিছু বিষয় আছে যেগুলোকে স্বাভাবিক মনে করা হতো , সে কাজগুলোকে এখন চরম পন্থা মনে করা হয়।পৃথিবীতে এমন সমাজ ও আছে যেখানে কেউ যদি নিয়মিত পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে ,তাহরে তাকে চরমপন্থি মনে করা হয় । তাকে নজরদারিতে রাখা হয় । এবং পাহারা দেয়া হয়। কারণ কেউ সালাত আদায় করবে সেটা সে সমাজের কাছে খুবই চরমপন্থি কাজ হিসেবে মনে হয়।
পৃথিবীতে এমন জায়গাও আছে , এখানে কোন নারী যদি হিজাব পরেন, তাহলে সেটা রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা ,চাকরী না পাওয়া বা অন্য কোন অধিকার হতে বঞ্চিত হওয়ার জন্য হিজাব পরার অপরাধটাই যথেষ্ট। যেটা কিছু জায়গায় স্বাভাবিক আবার কিছু জায়গায় চরমপন্থি হিসেবে বিবেচনা করা হয় । যেটা আসলেই একটা ভাল কাজ আর সেটাকে একটা মন্দ কাজ বরে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর যেগুলো আসলেই মন্দ কাজ, যেগুলো মন্দ কাজ হিসেবেই বিবেচনা করা হতো ,সেগুলোকে কিছু সময় পরে মানুষ অত বেশি মন্দ কাজ মনে করছে না ।তারপর সেটা মানুষের কাছে সহনীয় হয়ে যায় । তারপর আস্থে আস্থে সেটা সমাজের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যায় । তারপর একসময় সেটা সমাজে বাধ্যতামূলক হয়ে যায় ।
এভাবেই ভাল-মন্দ পরিমাপের মানদন্ড পরিবর্তিত হতে থাকে। আর ও দশ বছর পরে যখন আপনারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাবেন,তখন পৃথিবী এবং পৃথিবীর ভাল-মন্দ যেভাবে দেখে সেভাবে পরিবর্তন হবে। কিছুদিন পরে সেটা আবার পরিবর্তন হবে । আরো কিছুদিন পরে সেটা আবারও পরিবর্ত হবে। সমাজে ভাল ও মন্দের সংজ্ঞা সব সময় পরিবর্তিত হতে থাকবে। তারা এই বিষয়ে কী বলে জানেন ?তারা তখন বলবে এটা ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়। কোনটা ভাল কোনটা খারাপ সেটা আপনি ঠিক করবেন। এক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তির স্বাধীনতা রয়েছে। এমনটিই তাদের চিন্তা-ভাবনা। একজন মুসলিমের ব্যক্তি স্বাধীনতা কী ?আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা হলো – আমরা স্বাচ্ছন্দে নিজেদেরকে আল্লাহর দাসত্ব সপে দিই। এটিই একজন মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। যেহেতু আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে আত্মসমর্পন করি, তাই আমরা নিজেরা ভাল-মন্দ নিরূপন করিনা। আমাদের বিবেক আমাদের নৈতিকতা সেটাই যেটা আল্লাহ আমাদের জন্য নাযিল করেছেন এবং যা নবি-রাসূলগণ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন । যেটা মানবজাতির ইতিহাসে সবসময় একই ছিল। বিভিন্ন সমাজে, বিভিন্ন সভ্যতায়, বিভিন্ন মহাদেশে ,বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের কাছে ।