নামাযের ওয়াক্ত এবং নিষিদ্ধ সময়

Muhammad Jamal Uddin
0
নামাযের ওয়াক্ত এবং নিষিদ্ধ সময়


নামাযের বিবরণ

ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভঃ কলেমা (ঈমান), নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত। নামায

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা মুমিনগণকে সর্বপ্রথম নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। শিশুর বয়স যখন সাত বছর হবে, তখন তাকে নামায পড়ার জন্য শিক্ষা ও নির্দেশ দিতে হবে। সে যখন দশ বছরে পদার্পণ করবে, তখন তাকে নামায পড়তে বাধ্য করতে হবে। না পড়লে প্রহার/ শাসনের মাধ্যমে নামায পড়াতে হবে।

নামাযের ফযীলত ঃ

নামায় ইসলাম ধর্মের একটি স্তম্ভ। যে নামায ক্বায়েম করে সে তার ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করে। যে নামায বর্জন করে, সে ধর্মকে বরবাদ করে দেয়। আল হাদীস।

হযরত রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং এক জুমু'আহ্ থেকে অন্য জুমু'আহ্ এবং রমযান শরীফের রোযা পরবর্তী রমযান পর্যন্ত সব গুনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়।[সহীহ মুসলিম।

 হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, এয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় ইবাদত কি? তিনি উত্তরে বললেন, ওয়াক্ত অনুযায়ী নামায পড়া। [বুখারী ও মুসলিম শরীফ]

 হযরত আবূ যার রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, একদা শীতকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা বাইরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন। তিনি গাছের দু'টি ডাল হাতে নিলেন। উক্ত ডাল দু'টি থেকে পাতা ঝড়ে পড়ছিলো। তখন হুযূর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আবূ যার! যে বান্দা আল্লাহর ওয়াস্তে নামায পড়ে, তার গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে যায়, যেভাবে এ দু'টি ডাল থেকে পাতা ঝরছে।”

হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিজ ঘরে ওযূ করে ফরয আদায় করার জন্য মসজিদে গমন করে, তার প্রতিটি পদক্ষেপে এক একটা গুনাহ মাফ হয় এবং তার এক একটা মতবা বুলন্দ হয়। মুসলিম শরীফ।

হযরত আবূ উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহর বান্দা যখন নামায পড়ার জন্য দণ্ডায়মান হয়, তখন তার জন্য বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। তার এবং আল্লাহ্ তা'আলার মাঝখানে পর্দাসমূহ সরিয়ে ফেলা হয়। বেহেশতের রূপসী হুর তাঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে।” [তাবরানী]

যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত ফজর ও এশার নামায জামা'আত সহকারে আদায় করবেন, আল্লাহ পাক তাকে দোযখের আগুন ও মুনাফেকী থেকে নাজাত দেবেন।

হাদীস শরীফে আছে, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায় ছেড়ে দেয়, জাহান্নামের দরজায় তার নাম লিখে দেওয়া হয়।

বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, আমীরুল মু'মিনীন হযরত ওমর ফারূক্ব হাড়িয়াল্লাহু তাআলা আনহু বিভিন্ন প্রদেশের গভর্ণরদের নিকট নির্দেশ পাঠালেন, আমার কাছে তোমাদের সব কাজ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ওয়াদ্ভূত অনুসারে নামায পড়া। যে নামায় ঠিকমত আদায় করেছে, সে তার ধর্মকে রক্ষা করেছে, আর “যে ব্যক্তি নামায বাদ দেয় (ওয়াকৃত অনুসারে সম্পন্ন কর না) সে অন্যান্য কর্তব্য কাজ তো অবশ্যই বরবাদ করে দেবে।”

হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে আমার সাহাবীগণ! তোমরা বলো, যদি তোমাদের কারো বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি পুকুর থাকে, যদি সে প্রত্যেহ ওই পুকুরে পাঁচবার করে গোসল করে, তবে তার শরীরে কোনরূপ ময়লা থাকতে পারে কি?” তদুত্তরে সাহাবীগণ বললেন- “না, থাকতেই পারে না।” হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা হচ্ছে পাঁচ ওয়াকৃত নামাযের দৃষ্টান্ত। ওই নামাযগুলো দ্বারা আল্লাহ পাক তোমাদের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন।

নামাযের ওয়াক্কুওসমূহ ঃ

দৈনিক পাঁচবার নামায পড়া ফরয। এ নামাযের জন্য শরীয়তের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত আছেঃ ১. ফজর, ২. যোহর, ৩. আসর, ৪. মাগরিব ও ৫. এশা।

ফজরের নামাযের ওয়াক্ত ঃ
সূবহে সাদেক্ব থেকে শুরু করে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত ফজরের নামাযের সময়। সুবহে সাদেক হচ্ছে এমন এক প্রকার আলো, যা সূর্য উদিত হওয়ার আগে পূর্ব আকাশের কিনারায় প্রকাশ পায় এবং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। শেষ পর্যন্ত আকাশের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং চারদিক উজ্জ্বল হয়ে যায়।

যোহরের নামাযের ওয়াক্ত ঃ

দ্বি-প্রহরে সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে প্রত্যেক জিনিষের ছায়ামুল ব্যতীত দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ ঠিক বিপ্রহরের সময় কোন জিনিসের ছায়া যদি চার আঙ্গুল পরিমাণ থাকে, আর জিনিষটি হলো আট আঙ্গুল পরিমাণ লম্বা, তাহলে ওই জিনিসটার ছায়া যখন সর্বমোট বিশ আঙ্গুল পরিমাণ দীর্ঘ হবে, তখন যোহরের নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, জুমু'আর নামাযের ওয়াক্ত হচ্ছে যোহরের নামাযের ওয়াক্বতের অনুরূপ।

আসরের নামাযের ওয়াক্ত ঃ
যোহরের ওয়াক্ত শেষ হবার সাথে সাথে আসর নামাযের ওয়াকৃত শুরু হয় এবং সূর্য সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সূর্য অস্ত যাওয়ার বিশ মিনিট পূর্ব থেকে আসরের নামায পড়া মাকরূহ।

মাগরিবের নামাযের ওয়াক্বত ঃ

মাগরিবের ওয়াকৃত হচ্ছে সূর্য ডুবার পর থেকে পশ্চিম আকাশের সাদা আভা চলে। যাওয়া পর্যন্ত। সাদা আভাটা লালিমা বিলুপ্ত হওয়ার পর পশ্চিামাকাশে সুবহে সাদেকের সাদা আভার মত উত্তর দক্ষিণে বিস্তার লাভ করে।

 এশার নামাযের ওয়াক্ত ঃ
মাগরিবের পর থেকে সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত এশার নামাযের ওয়াকৃত বলবৎ থাকে। তবে মধ্য রাত্রির পূর্ব পর্যন্ত সময়ে এশার নামায পড়ে নেয়া উত্তম। বিতরের নামায এশার নামাযের পরে পড়তে হয়; পূর্বে নয়।

যেসব সময়ে নামায পড়া নিষেধ ঃ
সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ঠিক দুপুর-এ তিন সময়ে ফরয, ওয়াজিব, নফল, কাযা নামায পড়া এবং তিলাওয়াতে সাজদা করা জায়েয নয়। যদি আসরের নামায না পড়ে থাকে, তবে ওই দিনের আসরের নামায সূর্যাস্তের সময় পড়তে পারবে; কিন্তু এতটুকু দেরী করা হারাম; ওই সময়ে আদায়কৃত ওইদিনের নামাযও মাকরূহ।

মাসআলাঃ জানাযা যদি নিষিদ্ধ সময়ে আনা হয়, তাহলে ওই সময় জানাযার নামায পড়ে নেয়া মাকরূহ নয়। তবে জানাযা যদি আগে থেকেই মজুদ ছিলো দেরী করার কারণে মকরূহ সময় হয়ে গেলো, ওই অবস্থায় জানাযার নামায পড়া মকরূহ।

মাসআলাঃ উপরোক্ত তিন ওয়াক্তে তিলাওয়াতে ক্বোরআন মজীদ ভাল নয়। যিকর ও দরূদ শরীফ পাঠে নিয়োজিত থাকা উত্তম। মাসআলাঃ বারটি নির্দিষ্ট সময়ে নফল নামায পড়া নিষেধঃ
 ১. সুবহে সাদেক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের দু'রাকাত সুন্নাত ব্যতীত অন্য কোন নফল নামায পড়া জায়েয নয়। 
২. জামা'আতের ইক্বামত থেকে জাম আত শেষ হওয়া পর্যন্ত নফল ও সুন্নাত পড়া মকরূহ তাহরীমী। অবশ্য যদি ফজরের জাম আত শুরু হয় এবং এটা অনুমিত হয় যে, সুন্নাত পড়ার পরও জামা'আত পাওয়া যাবে তখন জামাআত থেকে পৃথক জায়গায় সুন্নাত পড়ে যেন জামা'আতে শরীক হয় । আর যদি এটা অনুমিত হয় যে, সুন্নাত পড়তে গেলে জামাআত মিলবেনা, তাহলে সুন্নাত ত্যাগ করে জামা'আতে শরীক হবে এবং সূর্যোদয়ের পর সুন্নাত আদায় করবে। ফজর ব্যতীত অন্য নামাযসমূহে জামা'আত পাওয়ার দৃঢ় ধারণা থাকলেও ইক্বামত হয়ে যাবার পর সুন্নাত পড়া না-জায়েয।

৩. আসরের নামাযের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত নফল নামায পড়া নিষেধ।

৪. সূর্য ডুবার পর থেকে ফরয পড়া পর্যন্ত নফল নামায পড়া জায়েয় নয়। ৫. ইমাম জুমু'আর খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়ান, তখন থেকে জুমু'আর ফরয নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত নফল নামায পড়া নিষেধ।

৬. ঠিক খুৎবা দেয়ার সময়, সেটা প্রথম খুত্বা হোক কিংবা দ্বিতীয় খুত্বা হোক, অথবা ঈদের খুতবা হোক কিংবা সূর্য গ্রহণ, ইসতিসরা, হয় ও বিবাহের হোক, কোন নামায এমনকি কাযাও জায়েয নয়। কিন্তু 'সাহেবে তারতীব' অর্থাৎ নিয়মিত নামায আদায়কারীর জন্য মুতবার সময় কাযা নামায পড়ার অনুমতি রয়েছে।

মাসআলাঃ কেউ জুমু'আর সুন্নাত শুরু করার পর ইমাম খুৎবা দেয়ার জন্য স্বীয় জায়গা থেকে উঠলেন, তাহলে সে যেন চার রাকাআত পূর্ণ করে। ৭. উভয় ঈদের নামাযের আগে নফল নামায পড়া মাকরূহ। ঘরে হোক কিংবা ঈদাগাহে হোক, অথবা হোক মসজিদে। (আলমগীরী, দুররুল মোখতার)

৮. ঈদের নামাযের পরও নফল নামায ঘরে পড়লে মাকরূহ নয়।

৯. আরাফাতের ময়দানে যোহর ও আসর মসজিদে নামরায় ইমামের সাথে পড়লে এক সাথে পড়তে হয়। তখন এর মাঝখানে কিংবা পরে নফল ও সুন্নাত পড়া মাকরূহ।

১০. মুযদালিফাতেও যে মাগরিব ও এশা এক সাথে পড়া হয়, এর মাঝখানে নফল ও সুন্নাত পড়া মাকরূহ। কিন্তু পরে পড়লে মাকরূহ নয়। আলমগীরী, দুররুল মোখতার!

১১. যা দ্বারা মনের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি হয় এবং তা দূর করা সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও দূর না করে, তখন যে কোন নামায পড়া মাকরূহ। যেমন প্রস্রাব, পায়খানা বা বায়ূর হাজত হওয়া অবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য যদি সময় না থাকার কারণে এমতাবস্থায়ও পড়ে নেয়, তবে তা পরে দ্বিতীয়বার পড়বে। অনুরূপ, খাবার সামনে আনা হলো এবং খাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হলো, অথবা অন্য কোন এমন বিষয়ের সম্মুখীন হলো, যেটা সমাধা না হলে মনে স্বস্তিবোধ আসে না এবং নামাযের মধ্যে একাগ্রতা সৃষ্টি হয় না, এমতাবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ। [দুররুল মোখতার ইত্যাদি।

নামাযের পূর্বশর্তসমূহ ঃ
নামায শুরুর পূর্বে ৭টি ফরয সম্পন্ন করতে হয়। সেগুলো হচ্ছে ঃ ১. শরীর পাক করা, ২. কাপড় পাক করা, ৩. নামাযের স্থান পাক হওয়া, ৪. সতর আবৃত রাখা, ৫. কেবলামুখী হওয়া এবং ৬ নিয়ত করা। এগুলো সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

১. শরীর পাক করা : ওযূর প্রয়োজন হলে ওযূ করতে হবে। গোসলের প্রয়োজন হলে গোসল সেরে নিতে হবে। শরীয়ত সম্মত কারণে ওযূ ও গোসল করতে সক্ষম না হলে তায়াম্মুম করে নিতে হবে। ওযু, গোসল এবং তায়াম্মুম সম্পর্কে ইতোপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আরো কয়েকটি জরুরী বিষয় জেনে রাখা উচিত। যেমন-

ক. অনেকের শরীর দুর্বল। রাতে গোসল করলে তদের সর্দি কাশি বা অন্যকোন ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়। এ ধরনের কেউ কেউ সহবাসজনিত বা অন্য কোনো কারণে নাপাক হলে অসুস্থতার ভয়ে গোসল করে না এবং ফজরের নামায ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয় আর দিনের বেলায় গোসল করে নামাযের ক্বাযা করে এটা উচিত নয়। আল্লাহকে ভয় করা উচিত। জানা উচিত ওযরবশতঃ তায়াম্মুম ওযূ ও গোসলের স্থলাভিষিক্ত। এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নেয়া উচিত। নামায ছেড়ে দেয়া উচিৎ নয়।

খ. অপরাগ অবস্থায় শুধু গোসলের ফরযগুলি আদায় করে গোসল করা যাবে। যেমন একবার গরগরা করে কুল্লি করে নাকে ভালোভাবে পানি দিয়ে শরীরের প্রতিটি লোয় সম্পূর্ণরূপে ভিজে যায় এমনভাবে সারা শরীরে একবার পানি বইয়ে নিলেই গোসল হয়ে যাবে। গোসলের পরে পুনরায় ওয় করার দরকার নেই। তবে এমন করা মাকরূহ।

গ. যদি শরীরের অর্ধেক ধুলে ক্ষতি হয়, তবে তায়াম্মুম করতে হবে। ঘ. গোসলের সময় মেয়েদের জন্য চুলের বেনী খোলার প্রয়োজন নেই। চুলের পানি পৌঁছলেই যথেষ্ট হবে।

৫. ফোড়া কিংবা কোনো ক্ষতের কারণে শরীরের কোন অংশে পট্টি বা ব্যান্ডেজ বাঁধা থাকলে ওই স্থানের উপর ভেজা হাতে মসেহ্ করে নিতে হবে।

চ. যে ব্যক্তির এমন কোনো রোগ আছে, যে রোগের কারণে তার ওযূ রাখা সম্ভব হয় না, যেমন প্রমেহ রোগের কারণে ফোঁটা ফোঁটা বীর্য নির্গত হওয়া ইত্যাদি অথবা বহুমূত্র রোগের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যার ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব নির্গত হয় কিংবা এ জাতীয় অন্য যে কোন রোগ থাকলে ওই ব্যক্তিকে প্রতি ওয়াকৃতের নামাযের আগে তাজা ওযু করে ওই অবস্থায়ই নামায পড়ে নিতে হবে। ওই নামাযের ওয়াকৃত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার ওযূ থাকবে। আর যতক্ষণ তার ওই রোগ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার পরিধানের ওই কাপড়সহ সে নামায পড়তে পারবে। এই সব নিয়ম না জানার কারণে কোন কোন উপরোক্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নামায ছেড়ে দেয় এবং বলে, “আমার ওযূ থাকে না। আমি নামায পড়বো কিভাবে?” শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী এরকম অবস্থায়ও নামায পড়া যাবে। একথা জানার পরও দ্বিধা সন্দেহে লিপ্ত হওয়া চরম মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।

২. কাপড় পাক রাখাঃ নামায পড়তে চাইলে কাপড় পাক রাখতেই হবে। কাপড় পাক করার মাসায়েল ইতোপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আরো কিছু কথা জেনে নেয়া ভালো। যেমন-

ক. এক দিরহামের বেশী পরিমাণ নাপাকী সঙ্গে থাকলে তার নামায হবে না। খ. রাস্তঘাটের পানি ও কাদার ছিটকে কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হবে না।

গ. সাধারণ বৃষ্টির পানি পাক।

৩. নামাযের স্থান পাক হওয়াঃ নামাযের জায়গা পাক হতে হবে। নামাযীর পা

রাখবার স্থান পাক হওয়া সর্বসম্মতভাবে ফরয। সাজদার স্থানও পাক থাকা ফরয। সাজদারত অবস্থায় দু' হাত, দু' হাঁটু এবং বগল ও বুকের মাঝখানের স্থানও পাক হওয়া জরুরী।

এ সম্পর্কে আরো দু/একটি কথা জেনে রাখা প্রয়োজন। যেমন- ক. নাপাক স্থানে পাতলা কাপড় বিছিয়ে নামায পড়লে যদি কাপড়ের নিচের স্থান দৃষ্টিগোচর হয়, তবে এ অবস্থায় নামায হবে না। খ. অবশ্য ওই স্থানের উপর শক্ত মোটা কাপড় বা মোটা জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়লে নামায বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।

গ. কোনো কাপড়ের অর্ধেক পাক আর অর্ধেক নাপাক হলে কাপড়টি ভাঁজ করে পাক অংশ উপরে রেখে নামায পড়তে হবে।

৪. সতর ঢেকে রাখাঃ যে সমস্ত অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয নামাযের মধ্যে সেগুলি ঢেকে রাখতে হবে। পুরুষদের জন্য নাভির নিচে থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। আর স্ত্রীলোকের জন্য মুখমণ্ডল, দু' হাতের কব্জি এবং দুই পায়ের গোড়ালী ছাড়া সমগ্র শরীর ঢেকে রাখা ফরয।

এ সম্পর্কে কিছু নিয়ম কানুন জেনে রাখা একান্ত জরুরীঃ

ক. কোনো স্ত্রী লোক যদি এতো পাতলা আঁচল বা ওড়না দিয়ে মস্তক আবৃত করে

যাতে করে মাথার চুলের এক চতুর্থাংশ দেখা যায় তবে তার নামায হবে না।
 খ. ফ্রীলোকের নামাযে হাতের কজির উপরের অংশ খোলা থাকলে নামায হবে না। কথা এ যে, স্ত্রীলোকদের যে সমস্ত ঢেকে রাখা ফরয, ওই সমস্ত অঙ্গের কোনটার চার ভাগের এক ভাগ নামাযের মধ্যে অনাবৃত।
 গ. এ অবস্থায় মেয়েদেরকে মোটা চাদর দিয়ে সমস্ত শরীর আবৃত করে নিয়ে নিবে।
ঘ. অপরের দৃষ্টি থেকে নিজের গুপ্তস্থান ঢেকে রাখা ফরয। নিজে দেখতে নিষেধ নেই। নামায পড়ার সময় যদি নিজের গুপ্তস্থান দেখে ফেলে, তবুও তার নামায হয়ে যাবে; কিন্তু মাকরূহ তাহরীমী হবে। আর অন্য কেউ তার গুপ্ত স্থান দেখে নামায হবে না।

৫. কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোঃ কা'বা শরীফ যেদিকে, সেদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে। নামায পড়তে হবে। এ সম্পর্কে আরো কিছু কথাও জানার আছে। যেমন- ক. কেউ কোনো নতুন জায়গায় উপস্থিত হলে অথবা দূরের পথ পাড়ি দিতে কোনো যানবাহনে থাকা অবস্থায় নামাযের সময় কোন দিকে তা স্থির করতে না পারলে, কাছে উপস্থিত কাউকে জিজ্ঞেস করে কেবলা সম্পর্কে তাকে জেনে নিতে হবে।

খ. জিজ্ঞাসা করার লোক না পাওয়া গেলে মনে মনে কেবলা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। তারপর যেদিকে কা'বা শরীফ আছে বলে দৃঢ় বিশ্বাস হয়। সেদিকে মুখ ফিরিয়েই নামায পড়ে নিতে হবে। নামাযের পর যদি জানতে পারে যে, যেদিকে মুখ করে সে নামায পড়েছে সেদিকে কেবলা ছিলো না, তবুও তার নামায হয়ে যাবে। পুনরায় তাকে সঠিক ক্বেবলামুখী হয়ে নামায পড়তে হবে না। গ. মনে মনে চিন্তা না করেই যদি কেউ কোন একদিকে মুখ করে নামায পড়ে নেয়, তবে তার নামায হবে না, যদিও পরে জানা যায় যে, তার ক্বেবলা ঠিকই ছিলো। কারণ, কেবলা না জানা থাকলে মনে মনে চিন্তা করে ক্বেবলা ঠিক করাই

৬. নিয়্যত করাঃ নিয়্যত করা মানে সংকল্প স্থির করা। কোন ওয়াক্বতের কোন নামায পড়া হচ্ছে সে সম্পর্কে মনস্থির করতে হবে। যেমন কেউ যদি মনে মনে। খেয়াল করে- আমি আল্লাহর ওয়াস্তে যোহরের নামায বা আসরের নামায় পড়ছি তবুও তার নিয়্যত করা হয়ে যাবে। মনে মনে নিয়্যত করা ফরয। মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করা ফরয নয়, মুস্তাহাব। এ সম্পর্কে আরো কিছু কথা জেনে নেয়া প্রয়োজন। যেমন-

ক. সুন্নত, নফল এবং তারাবীর নামাযে ‘আল্লাহর ওয়াস্তে নামায পড়ছি'- এরকম খেয়াল করে নামায শুরু করলেই নামায হয়ে যাবে। সুন্নাত, নফল অথবা তারাবীহ নির্দিষ্ট করে না বললেও চলবে। খ. ফরয নামাযের বেলায় ফজর, যোহর বা আসর কোন ওয়াক্তের নামায পড়া  হচ্ছে তা নির্দিষ্টভাবে খেয়াল করে নিতে হবে।

গ. ইমামের জন্য ইমামতির করা পূর্বশর্ত নয়। যদি কোন ব্যক্তি কোনো ওয়াক্বতের ফরয নামায পড়তে শুরু করে দেয় ওই সময় যদি অন্য কোনো এসে তাকে অনুসরণ করে (ইকৃতেদা করে) নামাযে শরীক হয়, তবুও তার নামায হয়ে যাবে; কিন্তু মোকৃতাদীর (অনুসরণকারী) ইকতেদার (অনুসরণ) নিয়্যত করা পূর্বশর্ত। মোক্বতাদীকে ‘এ ইমামের অনুসরণ করলাম' মর্মে খেয়াল অবশ্যই করতে হবে।

ঘ. যোহরের ওয়াক্বতের নামাযে দাঁড়িয়ে যদি কেউ ভূলবশতঃ আসরের নামায পড়ছি মর্মে মুখে উচ্চারণ করে তবুও তার যোহরের নামায হয়ে যাবে। কারণ মুখের নিয়্যত ফরয নয়। মনের নিয়্যত ফরয।

ঙ. নিয়্যতের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবর) মুখে বলে নামায় শুরু করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, ওয়াকৃত মতো নামায আদায় করা জরুরী। প্রত্যেক নামাযের জন্য নির্দিষ্ট ওয়াকৃত (সময়) আছে। ওয়াক্বত শুরু হওয়ার আগে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। আবার ওয়াকৃত শেষ হলে নামায 'কাযা' হয়ে যাবে। প্রত্যেক নামাযের মোস্তাহাব ওয়াকৃত, মকরূহ ওয়াকৃত এবং নামাযের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন সকল প্রকার নামায মোস্তাহাব সময়ে আদায় করা যায়। ইতোপূর্বে নামাযের ওয়াকৃত বা সময় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!