بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ١. إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ٢. فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَغْرَ . إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালুআল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
(১) আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি,
(২) সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর ।
(৩) নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো র্নিবংশ ৷
সূরা কাউসার এর সার সংক্ষেপঃ
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছিলেন। হঠাৎ মাথা তুলে হাসি মুখে তিনি বললেন অথবা তাঁর হাসির কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন ‘এই মাত্র আমার উপর একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে।' তারপর তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে সূরা কাওছার পাঠ করলেন। (মুসলিম ১/৩০০, আবূ দাউদ ৫/১১০, নাসাঈ ৬/৫৩৩)
তারপর তিনি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন : 'কাওছার কি তা কি তোমরা জান?' উত্তরে তাঁরা বললেন : ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল জানেন।' তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘কাওছার হল একটা জান্নাতী নদী। তাতে বহু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে এটা দান করেছেন। কিয়ামাতের দিন আমার উম্মাত সেই কাওছারের ধারে সমবেত হবে। আসমানে যত নক্ষত্র রয়েছে সেই কাওছারের পিয়ালার সংখ্যাও তত পরিমান। আল্লাহর কোন কোন বান্দাকে কাওছার থেকে সরিয়ে দেয়া হবে তখন আমি বলব : “হে আমার রাব্ব! এ আমার উম্মাত!' তখন তিনি আমাকে বলবেন : তুমি জাননা, তোমার (ইন্তেকালের) পর সে কত রকম বিদ'আত আবিষ্কার করেছে!' (মুসলিম ১/৩০০, আহমাদ ৩/১০২)
ইমাম আহমাদ (রহঃ) আনাস, (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম এবং একটি নদীর কাছে এলাম যার তীরের তাবুগুলি ছিল মুক্তা খচিত। আমি আমার হাতকে পানির ভিতর প্রবেশ করালাম এবং দেখতে পেলাম যে, উহা মিশক এর সুগন্ধি যুক্ত। আমি জিজ্ঞেস করলাম : হে জিবরাঈল! ইহা কি? তিনি উত্তরে বললেন : ইহা হল আল কাওছার যা আল্লাহ তা'আলা আপনাকে দান করেছেন। (আহমাদ ৩/১০৩) ।
ইমাম বুখারী (রহঃ) এবং ইমাম মুসলিম (রহঃ) আনাস ইবন মালিকের (রাঃ) বরাতে তাদের গ্রন্থে ইহা লিপিবদ্ধ করেছেন। তাদের বর্ণনায় রয়েছে, আনাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হল তখন তিনি বললেন : আমি একটি নদীর কাছে পৌছলাম যার তীরের অট্টালিকাগুলি ছিল মনি-মুক্তা খচিত। আমি জিজ্ঞেস করলাম : হে জিবরাঈল! ইহা কি? তিনি উত্তরে বললেন ইহা আল কাউছার। (বুখারী ৪৯৪৬)
ইমাম আহমাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল কাউছার কি ? তিনি উত্তরে বললেন , ইহা হল জান্নাতের একটি নদী যা আমার রাব্ব আমাকে দান করেছেন । এর পানি দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি, এর চারপাশে রয়েছে পাখি যাদের ঘাড়সমূহ পিংগল বর্ণের ।
উমার (রাঃ) বললেন : হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই ঐ পাখিগুলি দেখতে খুবই সুন্দর। রাসূল সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হে উমার! যে ঐ পাখি আহার করবে সে দেখতে তাদের চেয়েও অধিক সুন্দর হবে। (আহমাদ ৩/২২০)
সহীহ বুখারীতে সাঈদ ইবন যুবাইর (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কাওছারের মধ্যে ঐ কল্যাণ নিহিত রয়েছে যা আল্লাহ তা'আলা খাস করে তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন। আবূ বিশর (রহঃ) সাঈদ ইব্ন যুবাইরকে (রাঃ) বলেন : লোকদের তো ধারণা এই যে, কাওছার হল জান্নাতের একটি নদী। তখন সাঈদ (রহঃ) বললেন : জান্নাতে যে নদীটি রয়েছে সেটা ঐ কল্যাণের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ খাস করে তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন। (ফাতহুল বারী ৮/৬০৩)
ইমাম আহমাদ (রহঃ) ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল কাউছার হল জান্নাতের একটি নদী, যার দুই তীর হল সোনার তৈরী এবং উহা মনি-মুক্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত। উহার পানি দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। এ হাদীসটি একই ধারা বর্ণনায় তিরমিযী (রহঃ), ইবন মাজাহ (রহঃ), ইব্ন আবী হাতিম (রহঃ) এবং ইবন জারীর (রহঃ) তাদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) একে হাসান সহীহ বলেছেন। (আহমাদ ২/৬৭, তিরমিযী ৯/২৯৪, ইব্ন মাজাহ ২/১৪৫০, তাবারী ২৪/৬৫০ )
আল্লাহ তাআ'লা বলেন : হে নবী! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাওছার দান করেছি। অতএব তুমি স্বীয় রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরাই তো নির্বংশ। অর্থাৎ হে নাবী! তুমি নাফল সালাত ও কুরবানীর মাধ্যমে লা-শারীক আল্লাহর ইবাদাত কর। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন :
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. لَا شَرِيكَ
لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
তুমি বলে দাও : আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছু সারা জাহানের রাব্ব আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই, আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি, আর আত্মসমর্পকারীদের মধ্যে হলাম প্রথম । (সূরা আন'আম, ৬ : ১৬২-১৬৩)
কুরবানী দ্বারা এখানে উট বা অন্য পশু কুরবানীর কথা বলা হয়েছে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ), 'আতা (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), ইকরিমাহ (রহঃ) এবং হাসান বাসরী (রহঃ) বলেছেন যে, আয়াতের মর্মার্থে কুরবানীকে বুঝানো হয়েছে। (তাবারী ২৪/৬৫৩) কাতাদাহ (রহঃ), মুহাম্মাদ ইব্ন কা'ব আল কারাজী (রহঃ), যাহহাক (রহঃ), রাবী ইব্ন আনাস (রহঃ),
‘আতা আল খুরাসানী (রহঃ), আল হাকাম (রহঃ), ইসমাঈল ইব্ন আবী খালিদ (রহঃ) এবং সালাফগণের আরও অনেকে একই কথা বলেছেন। (তাবারী ২৪/৬৫৪) ইহা হল মূর্তিপূজক কাফিরদের আচরণের বিপরীত পন্থা, যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে সাজদাহ করে এবং তাঁর নামের পরিবর্তে অন্যের নামে কুরবানী করে। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা অন্য জায়গায় বলেন :
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ أَسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ
আর যে জন্তু যবাহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়না তা তোমরা আহার করনা । কেননা এটা গর্হিত বস্তু। (সূরা আনআম, ৬ : ১২১) এটাও বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হল সালাতের সময়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকে বাঁধা। এটা আলী (রাঃ) হতে গায়ের সহীহ সনদের সাথে বর্ণিত হয়েছে । শা'বী (রহঃ) এ শব্দের তাফসীর এটাই করেছেন। এর অর্থ কুরবানীর পশু যবাহ করা এ উক্তিটিই হল সঠিক উক্তি ।
এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের সালাত শেষ করার পরপরই নিজের কুরবানীর পশু যবাহ করতেন এবং বলতেন : 'যে আমাদের সালাতের মত সালাত আদায় করেছে এবং আমাদের কুরবানীর মত কুরবানী করেছে সে শারীয়াত সম্মতভাবে কুরবানী করেছে আর যে ব্যক্তি (ঈদের) সালাতের পূর্বেই কুরবানী করেছে তার কুরবানী আদায় হয়নি।' এ কথা শুনে আবূ বারদাহ ইব্ন দীনার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন : “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আজকের দিনে গোশতের চাহিদা বেশী হবে ভেবেই কি আপনি সালাতের পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছেন?' উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘তা হলে তো খাওয়ার গোশতই হয়ে গেল অর্থাৎ কুরবানী হলনা।' সাহাবীগণ (রাঃ) বললেন : হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বর্তমানে আমার কাছে একটি বকরীর শাবক রয়েছে, কিন্তু ওটা দু'টি বকরীর চেয়েও আমার কাছে অধিক প্রিয়। এ বকরীর শাবকটি কি আমার জন্য যথেষ্ট হবে?' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন : 'হ্যাঁ, তোমার জন্য যথেষ্ট হবে
বটে, কিন্তু তোমার পরে ছয় মাসের বকরী শাবক অন্য কেহ কুরবানী করতে পারবেনা।'
ইমাম আবূ জাফর ইবন জারীর (রহঃ) বলেন : তার কথাই যথার্থ যে বলে যে, এর অর্থ হল নিজের সকল সালাত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য আদায় কর, তিনি ছাড়া অন্য কারও জন্য আদায় করনা । তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর যিনি তোমাকে এরকম বুযর্গী ও নি‘আমাত দান করেছেন যে রকম বুযুর্গী ও নি‘আমাত অন্য কেহকেও দান করেননি। এটা একমাত্র তোমার জন্যই নির্ধারিত করেছেন। এই উক্তিটি খুবই উত্তম। মুহাম্মাদ ইব্ন কা'ব আল কারাযী (রহঃ) এবং 'আতা (রহঃ) একই কথা বলেছেন।
রাসূলের (সাঃ) প্রতি বিদ্বেষ পোষনকারী নির্বংশ
আল্লাহ তা'আলা সূরার শেষ আয়াতে বলেন : (হে নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষনকারীই তো নির্বংশ। অর্থাৎ যারা তোমার সাথে শত্রুতা করে তারাই অপমানিত, লাঞ্ছিত, তাদেরই লেজ কাটা এবং তাদেরকেই কেহ মনে রাখবেনা।
ইবন আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রহঃ) সাঈদ ইবন যুবাইর (রহঃ) কাতাদাহ (রহঃ) প্রমুখ বলেন যে, এই আয়াত আ'স ইন ওয়ায়েল সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। (তাবারী ২৪/৬৫৬, ৬৫৭) এই দুর্বৃত্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলোচনা শুনলেই বলত : 'ওর কথা রাখ, ওর কোন পুত্র সন্তান নেই। মৃত্যুর পরই তার নাম নিশানা মুছে যাবে। (নাউযুবিল্লাহ)। আল্লাহ তা'আলা তখন এ সূরা অবতীর্ণ করেন ।
শামীর ইবন আতিয়্যাহ (রহঃ) বলেন যে, উকবা ইবন আবী মুঈত সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এবং ইকরিমাহ (রহঃ) বলেন যে, কা'ব ইবন আশরাফ এবং কুরাইশদের একটি দল সম্পর্কে এ সূরা অবতীর্ণ হয়। (তাবারী ২৪/৬৫৭)
মুসনাদ বায্যারে ইব্ন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কা'ব ইবন আশরাফ যখন মাক্কায় আসে তখন কুরাইশরা তাকে বলে : 'আপনি তো তাদের সর্দার, আপনি কি ঐ ছোকরাকে (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) দেখতে পাননা? সে তার সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে আছে,
এতদসত্ত্বেও নিজেকে সবচেয়ে ভাল ও শ্রেষ্ঠ মনে করছে? অথচ আমরা পালনকারীদের দেখাশোনাকারী, কা'বাগৃহের তত্ত্বাবধায়ক এবং যমযম কূপের পানি সরবরাহকারী।' দুর্বৃত্ত কা'ব তখন বলল : 'নিঃসন্দেহে তোমরা তার চেয়ে উত্তম।' আল্লাহ তা'আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। এ হাদীসের সনদ সহীহ বা বিশুদ্ধ ।
‘আতা (রহঃ) বলেন যে, এ আয়াত আবূ লাহাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তানের ইন্তিকালের পর এ দুর্ভাগা দুর্বৃত্ত মুশরিকদেরকে বলতে লাগল ‘আজ রাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধারা বিলোপ করা হয়েছে।' আল্লাহ তা'আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন।
সুদ্দী (রহঃ) বলেন যে, যখন কারও পুত্র-সন্তান মারা যায় তখন তাকে ‘আবতার' বলা হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তানদের ইন্তিকালের পর শত্রুতার কারণে তারা তাঁকে ‘আবতার’ বলছিল। আল্লাহ তা'আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্পর্কেও ধারণা করেছিল যে, সন্তান বেঁচে থাকলে তাঁর আলোচনা জাগরুক থাকত। এখন আর সেটা সম্ভব নয়। অথচ তারা জানেনা যে, পৃথিবী টিকে থাকা অবধি আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম টিকিয়ে রাখবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শারীয়াত চিরকাল চলমান থাকবে। কিয়ামাত ও বিচার দিবস পর্যন্ত তাঁর নাম আকাশতলে উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান থাকবে। জলে স্থলে সর্বদা তাঁর নাম আলোকিত হতে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা কিয়ামাত পর্যন্ত আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর আল ও আসহাবের প্রতি দুরুদ ও সালাম সর্বাধিক পরিমাণে প্রেরণ করুন! আমীন!
সূরা কাওছার এর তাফসীর সমাপ্ত।
উমার (রাঃ) বললেন : হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই ঐ পাখিগুলি দেখতে খুবই সুন্দর। রাসূল সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হে উমার! যে ঐ পাখি আহার করবে সে দেখতে তাদের চেয়েও অধিক সুন্দর হবে। (আহমাদ ৩/২২০)
সহীহ বুখারীতে সাঈদ ইবন যুবাইর (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কাওছারের মধ্যে ঐ কল্যাণ নিহিত রয়েছে যা আল্লাহ তা'আলা খাস করে তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন। আবূ বিশর (রহঃ) সাঈদ ইব্ন যুবাইরকে (রাঃ) বলেন : লোকদের তো ধারণা এই যে, কাওছার হল জান্নাতের একটি নদী। তখন সাঈদ (রহঃ) বললেন : জান্নাতে যে নদীটি রয়েছে সেটা ঐ কল্যাণের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ খাস করে তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন। (ফাতহুল বারী ৮/৬০৩)
ইমাম আহমাদ (রহঃ) ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল কাউছার হল জান্নাতের একটি নদী, যার দুই তীর হল সোনার তৈরী এবং উহা মনি-মুক্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত। উহার পানি দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। এ হাদীসটি একই ধারা বর্ণনায় তিরমিযী (রহঃ), ইবন মাজাহ (রহঃ), ইব্ন আবী হাতিম (রহঃ) এবং ইবন জারীর (রহঃ) তাদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) একে হাসান সহীহ বলেছেন। (আহমাদ ২/৬৭, তিরমিযী ৯/২৯৪, ইব্ন মাজাহ ২/১৪৫০, তাবারী ২৪/৬৫০ )
আল্লাহ তাআ'লা বলেন : হে নবী! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাওছার দান করেছি। অতএব তুমি স্বীয় রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরাই তো নির্বংশ। অর্থাৎ হে নাবী! তুমি নাফল সালাত ও কুরবানীর মাধ্যমে লা-শারীক আল্লাহর ইবাদাত কর। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন :
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. لَا شَرِيكَ
لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
তুমি বলে দাও : আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছু সারা জাহানের রাব্ব আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই, আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি, আর আত্মসমর্পকারীদের মধ্যে হলাম প্রথম । (সূরা আন'আম, ৬ : ১৬২-১৬৩)
কুরবানী দ্বারা এখানে উট বা অন্য পশু কুরবানীর কথা বলা হয়েছে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ), 'আতা (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), ইকরিমাহ (রহঃ) এবং হাসান বাসরী (রহঃ) বলেছেন যে, আয়াতের মর্মার্থে কুরবানীকে বুঝানো হয়েছে। (তাবারী ২৪/৬৫৩) কাতাদাহ (রহঃ), মুহাম্মাদ ইব্ন কা'ব আল কারাজী (রহঃ), যাহহাক (রহঃ), রাবী ইব্ন আনাস (রহঃ),
‘আতা আল খুরাসানী (রহঃ), আল হাকাম (রহঃ), ইসমাঈল ইব্ন আবী খালিদ (রহঃ) এবং সালাফগণের আরও অনেকে একই কথা বলেছেন। (তাবারী ২৪/৬৫৪) ইহা হল মূর্তিপূজক কাফিরদের আচরণের বিপরীত পন্থা, যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে সাজদাহ করে এবং তাঁর নামের পরিবর্তে অন্যের নামে কুরবানী করে। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা অন্য জায়গায় বলেন :
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ أَسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ
আর যে জন্তু যবাহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়না তা তোমরা আহার করনা । কেননা এটা গর্হিত বস্তু। (সূরা আনআম, ৬ : ১২১) এটাও বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হল সালাতের সময়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকে বাঁধা। এটা আলী (রাঃ) হতে গায়ের সহীহ সনদের সাথে বর্ণিত হয়েছে । শা'বী (রহঃ) এ শব্দের তাফসীর এটাই করেছেন। এর অর্থ কুরবানীর পশু যবাহ করা এ উক্তিটিই হল সঠিক উক্তি ।
এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের সালাত শেষ করার পরপরই নিজের কুরবানীর পশু যবাহ করতেন এবং বলতেন : 'যে আমাদের সালাতের মত সালাত আদায় করেছে এবং আমাদের কুরবানীর মত কুরবানী করেছে সে শারীয়াত সম্মতভাবে কুরবানী করেছে আর যে ব্যক্তি (ঈদের) সালাতের পূর্বেই কুরবানী করেছে তার কুরবানী আদায় হয়নি।' এ কথা শুনে আবূ বারদাহ ইব্ন দীনার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন : “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আজকের দিনে গোশতের চাহিদা বেশী হবে ভেবেই কি আপনি সালাতের পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছেন?' উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘তা হলে তো খাওয়ার গোশতই হয়ে গেল অর্থাৎ কুরবানী হলনা।' সাহাবীগণ (রাঃ) বললেন : হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বর্তমানে আমার কাছে একটি বকরীর শাবক রয়েছে, কিন্তু ওটা দু'টি বকরীর চেয়েও আমার কাছে অধিক প্রিয়। এ বকরীর শাবকটি কি আমার জন্য যথেষ্ট হবে?' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন : 'হ্যাঁ, তোমার জন্য যথেষ্ট হবে
বটে, কিন্তু তোমার পরে ছয় মাসের বকরী শাবক অন্য কেহ কুরবানী করতে পারবেনা।'
ইমাম আবূ জাফর ইবন জারীর (রহঃ) বলেন : তার কথাই যথার্থ যে বলে যে, এর অর্থ হল নিজের সকল সালাত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য আদায় কর, তিনি ছাড়া অন্য কারও জন্য আদায় করনা । তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর যিনি তোমাকে এরকম বুযর্গী ও নি‘আমাত দান করেছেন যে রকম বুযুর্গী ও নি‘আমাত অন্য কেহকেও দান করেননি। এটা একমাত্র তোমার জন্যই নির্ধারিত করেছেন। এই উক্তিটি খুবই উত্তম। মুহাম্মাদ ইব্ন কা'ব আল কারাযী (রহঃ) এবং 'আতা (রহঃ) একই কথা বলেছেন।
রাসূলের (সাঃ) প্রতি বিদ্বেষ পোষনকারী নির্বংশ
আল্লাহ তা'আলা সূরার শেষ আয়াতে বলেন : (হে নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষনকারীই তো নির্বংশ। অর্থাৎ যারা তোমার সাথে শত্রুতা করে তারাই অপমানিত, লাঞ্ছিত, তাদেরই লেজ কাটা এবং তাদেরকেই কেহ মনে রাখবেনা।
ইবন আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রহঃ) সাঈদ ইবন যুবাইর (রহঃ) কাতাদাহ (রহঃ) প্রমুখ বলেন যে, এই আয়াত আ'স ইন ওয়ায়েল সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। (তাবারী ২৪/৬৫৬, ৬৫৭) এই দুর্বৃত্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলোচনা শুনলেই বলত : 'ওর কথা রাখ, ওর কোন পুত্র সন্তান নেই। মৃত্যুর পরই তার নাম নিশানা মুছে যাবে। (নাউযুবিল্লাহ)। আল্লাহ তা'আলা তখন এ সূরা অবতীর্ণ করেন ।
শামীর ইবন আতিয়্যাহ (রহঃ) বলেন যে, উকবা ইবন আবী মুঈত সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এবং ইকরিমাহ (রহঃ) বলেন যে, কা'ব ইবন আশরাফ এবং কুরাইশদের একটি দল সম্পর্কে এ সূরা অবতীর্ণ হয়। (তাবারী ২৪/৬৫৭)
মুসনাদ বায্যারে ইব্ন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কা'ব ইবন আশরাফ যখন মাক্কায় আসে তখন কুরাইশরা তাকে বলে : 'আপনি তো তাদের সর্দার, আপনি কি ঐ ছোকরাকে (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) দেখতে পাননা? সে তার সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে আছে,
এতদসত্ত্বেও নিজেকে সবচেয়ে ভাল ও শ্রেষ্ঠ মনে করছে? অথচ আমরা পালনকারীদের দেখাশোনাকারী, কা'বাগৃহের তত্ত্বাবধায়ক এবং যমযম কূপের পানি সরবরাহকারী।' দুর্বৃত্ত কা'ব তখন বলল : 'নিঃসন্দেহে তোমরা তার চেয়ে উত্তম।' আল্লাহ তা'আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। এ হাদীসের সনদ সহীহ বা বিশুদ্ধ ।
‘আতা (রহঃ) বলেন যে, এ আয়াত আবূ লাহাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তানের ইন্তিকালের পর এ দুর্ভাগা দুর্বৃত্ত মুশরিকদেরকে বলতে লাগল ‘আজ রাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধারা বিলোপ করা হয়েছে।' আল্লাহ তা'আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন।
সুদ্দী (রহঃ) বলেন যে, যখন কারও পুত্র-সন্তান মারা যায় তখন তাকে ‘আবতার' বলা হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তানদের ইন্তিকালের পর শত্রুতার কারণে তারা তাঁকে ‘আবতার’ বলছিল। আল্লাহ তা'আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্পর্কেও ধারণা করেছিল যে, সন্তান বেঁচে থাকলে তাঁর আলোচনা জাগরুক থাকত। এখন আর সেটা সম্ভব নয়। অথচ তারা জানেনা যে, পৃথিবী টিকে থাকা অবধি আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম টিকিয়ে রাখবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শারীয়াত চিরকাল চলমান থাকবে। কিয়ামাত ও বিচার দিবস পর্যন্ত তাঁর নাম আকাশতলে উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান থাকবে। জলে স্থলে সর্বদা তাঁর নাম আলোকিত হতে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা কিয়ামাত পর্যন্ত আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর আল ও আসহাবের প্রতি দুরুদ ও সালাম সর্বাধিক পরিমাণে প্রেরণ করুন! আমীন!
সূরা কাওছার এর তাফসীর সমাপ্ত।
****************
নাফল সালাতে সূরা কাফিরুন পাঠ করা প্রসঙ্গ ঃ
সহীহ মুসলিমে যাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াফের পর দুই রাক'আত সালাতে এই সূরা এবং চামার ত সূরা পাঠ করতেন। (মুসলিম ২/৮৮৮)
সহীহ মুসলিমে যাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াফের পর দুই রাক'আত সালাতে এই সূরা এবং চামার ত সূরা পাঠ করতেন। (মুসলিম ২/৮৮৮)
সহীহমুসলিমেই আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাজরের দুই রাক'আত সুন্নাত সালাতেও এ সূরা দু'টি পাঠ করতেন। (মুসলিম ১/৫০২)
মুসনাদ আহমাদে ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাজরের পূর্বের দুই রাক'আতে এবং মাগরিবের পরের দুই রাক'আতে ১,৩৮ এবং dis ১। এই সূরা দু'টি দশ কিংবা বিশেরও অধিক বিভিন্ন সময়ে পাঠ করতেন। (আহমাদ ২/২৪, ৫৮ )
মুসনাদ আহমাদে ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : 'আমি এবং মাগরিবের দুই রাক'আত সুন্নাত সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ১, মা রাতে এবং তা না এইট এই সূরা দু'টি চব্বিশ অথবা পঁচিশ বিভিন্ন দিনে পড়তে দেখেছি। (আহমাদ ২/৯৯)
মুসনাদ আহমাদেরই অন্য এক রিওয়ায়াতে ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক মাস ধরে ফাজরের পূর্বের দুই রাক'আত সালাতে এবং মাগরিবের পরের দুই রাক'আত সালাতে ১এ সূরা দু'টি পাঠ করতে
দেখেছেন। (আহমাদ ২/৯৪, তিরমিযী ২/৪৭০, ইব্ন মাজাহ ১/৩৬৩, নাসাঈ ২/১৭০) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছে
এই সূরাটি যে কুরআনের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য এ বর্ণনাটি ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। − সূরাটিও একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।
মুসনাদ আহমাদে ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাজরের পূর্বের দুই রাক'আতে এবং মাগরিবের পরের দুই রাক'আতে ১,৩৮ এবং dis ১। এই সূরা দু'টি দশ কিংবা বিশেরও অধিক বিভিন্ন সময়ে পাঠ করতেন। (আহমাদ ২/২৪, ৫৮ )
মুসনাদ আহমাদে ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : 'আমি এবং মাগরিবের দুই রাক'আত সুন্নাত সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ১, মা রাতে এবং তা না এইট এই সূরা দু'টি চব্বিশ অথবা পঁচিশ বিভিন্ন দিনে পড়তে দেখেছি। (আহমাদ ২/৯৯)
মুসনাদ আহমাদেরই অন্য এক রিওয়ায়াতে ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক মাস ধরে ফাজরের পূর্বের দুই রাক'আত সালাতে এবং মাগরিবের পরের দুই রাক'আত সালাতে ১এ সূরা দু'টি পাঠ করতে
দেখেছেন। (আহমাদ ২/৯৪, তিরমিযী ২/৪৭০, ইব্ন মাজাহ ১/৩৬৩, নাসাঈ ২/১৭০) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছে
এই সূরাটি যে কুরআনের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য এ বর্ণনাটি ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। − সূরাটিও একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।
সূরা কোফিরূন ও এর বঙ্গানুবাদঃ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
قُلْ يأَهَا الْكَفِرُونَ
لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ
وَلَا أَنتُمْ عَبدُونَ مَاأَعْبُدُ
. وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُم
. وَلَا أَنتُمْ عَبِدُونَ مَا أَعْب
বঙ্গানুবাদঃ পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
(১) বলুন! হে কাফিরেরা।
(২) আমি তার ইবাদাত করিনা যার ইবাদাত তোমরা কর,
(৩) এবং তোমরাও তাঁর ইবাদাতকারী নও যাঁর ইবাদাত আমি করি,
(৪) এবং আমি ইবাদাতকারী নই তার যার ইবাদাত তোমরা করে আসছ,
(৫) এবং তোমরা তাঁর ইবাদাতকারী নও যাঁর ইবাদাত আমি করি ।
(৬) তোমাদের জন্য তোমাদের কর্মফল এবং আমার জন্য কর্মফল ।
শির্ক থেকে মুক্ত থাকার অঙ্গীকার প্রসঙ্গ
এই মুবারাক সূরায় আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের আমলের প্রতি তাঁর অসন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন এবং একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে মাক্কার কুরাইশদেরকে সম্বোধন করা হলেও পৃথিবীর সমস্ত কাফিরকে এই সম্বোধনের আওতায় আনা হয়েছে। এই সূরার শানে নুযূল এই যে, কাফিরেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল ঃ 'এক বছর আপনি আমাদের মা'বূদ মূর্তিগুলোর ইবাদাত করুন, পরবর্তী বছর আমরাও এক আল্লাহর ইবাদাত করব।' তাদের এই প্রস্তাবের জবাবে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা এ সূরা নাযিল করেন।
(১) বলুন! হে কাফিরেরা।
(২) আমি তার ইবাদাত করিনা যার ইবাদাত তোমরা কর,
(৩) এবং তোমরাও তাঁর ইবাদাতকারী নও যাঁর ইবাদাত আমি করি,
(৪) এবং আমি ইবাদাতকারী নই তার যার ইবাদাত তোমরা করে আসছ,
(৫) এবং তোমরা তাঁর ইবাদাতকারী নও যাঁর ইবাদাত আমি করি ।
(৬) তোমাদের জন্য তোমাদের কর্মফল এবং আমার জন্য কর্মফল ।
শির্ক থেকে মুক্ত থাকার অঙ্গীকার প্রসঙ্গ
এই মুবারাক সূরায় আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের আমলের প্রতি তাঁর অসন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন এবং একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে মাক্কার কুরাইশদেরকে সম্বোধন করা হলেও পৃথিবীর সমস্ত কাফিরকে এই সম্বোধনের আওতায় আনা হয়েছে। এই সূরার শানে নুযূল এই যে, কাফিরেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল ঃ 'এক বছর আপনি আমাদের মা'বূদ মূর্তিগুলোর ইবাদাত করুন, পরবর্তী বছর আমরাও এক আল্লাহর ইবাদাত করব।' তাদের এই প্রস্তাবের জবাবে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা এ সূরা নাযিল করেন।
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদেশ করছেন : তুমি বলে দাও, হে কাফিরেরা! না আমি তোমাদের উপাস্যদের উপাসনা করি, না তোমরা আমার মা'বূদের ইবাদাত কর। আর না আমি তোমাদের উপাস্যদেরকে উপাসনা করব, না তোমরা আমার মাবূদের ইবাদাত করবে। অর্থাৎ আমি শুধু আমার মাবূদের পছন্দনীয় পদ্ধতি অনুযায়ী তাঁরই ইবাদাত করব, তোমাদের ইবাদাতের পদ্ধতি তো তোমরা নতুনভাবে উদ্ভাবন করে নিয়েছ। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে :
إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنفُسُ وَلَقَدْ جَاءَهُم مِّن رَّهِمُ أَهْدَى
তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট তাদের রবের পথনির্দেশ এসেছে। (সূরা নাজম, ৫৩ : ২৩)
إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنفُسُ وَلَقَدْ جَاءَهُم مِّن رَّهِمُ أَهْدَى
তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট তাদের রবের পথনির্দেশ এসেছে। (সূরা নাজম, ৫৩ : ২৩)
অতএব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সংস্পর্শ হতে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে নিয়েছেন এবং তাদের উপাসনা পদ্ধতি ও উপাস্যদের প্রতি সর্বাত্মক অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। লক্ষ্যণীয় যে, প্রত্যেক ইবাদাতকারীরই মা'বূদ বা উপাস্য থাকবে এবং উপাসনার পদ্ধতি থাকবে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর উম্মাত শুধু আল্লাহ তা'আলারই ইবাদাত করেন। নাবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীরা তাঁরই শিক্ষা অনুযায়ী ইবাদাত করে থাকে। এ কারণেই ঈমানের মূলমন্ত্র হল : (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রাসূল।' এর অর্থ হল, সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ ছাড়া এমন কিছু নেই, যার ইবাদাত করা যেতে পারে। নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে একমাত্র পথ বাতলে দেয়া হয়েছে এ ছাড়া তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে দ্বিতীয় আর কোন পথ নেই ।
পক্ষান্তরে কাফির মুশরিকদের উপাস্য বা মা'বূদ আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন, তাদেউপাসনার পদ্ধতিও ভিন্ন ধরনের। আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতির সাথে তাদের কোনই মিল নেই। এ জন্যই আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন কাফিরদেরকে জানিয়ে দেন : তোমাদের জন্য তোমাদের দীন এবং আমার জন্য আমার দীন। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেন :
وَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل لِّي عَمَلِي وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ أَنتُم بَرِيكُونَ مِمَّا أَعْمَلُ
وَأَنَا بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُونَ
(হ নাবী) আর যদি তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে থাকে তাহলে তুমি বলে দাও : আমার কর্মফল আমি পাব, আর তোমাদের কর্মফল তোমরা পাবে। তোমরা তো আমার কৃতকর্মের জন্য দায়ী নও, আর আমিও তোমাদের কর্মের জন্য দায়ী নই। (সূরা ইবরাহীম, ১০ : ৪১) আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আরো বলেন :
لَنَا أَعْمَلُنَا وَلَكُمْ أَعْمَلُكُمْ
আমাদের কাজ আমাদের এবং তোমাদের কাজ তোমাদের। (সূরা শুরা, ৪২ ঃ ১৫, ২৮ ঃ ৫৫) অর্থাৎ আমাদের কর্মের জন্য তোমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবেনা এবং তোমাদের কর্মের জন্য আমাদেরকেও জবাবদিহি করতে হবেনা ।
সহীহ বুখারীতে এ আয়াতের তাফসীরে লিখা হয়েছে : তোমাদের জন্য তোমাদের দীন অর্থাৎ কুফর, আর আমার জন্য আমার দীন অর্থাৎ ইসলাম । (ফাতহুল বারী ৮/৬০৪ )
সূরা কাফিরুন এর তাফসীর সমাপ্ত
وَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل لِّي عَمَلِي وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ أَنتُم بَرِيكُونَ مِمَّا أَعْمَلُ
وَأَنَا بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُونَ
(হ নাবী) আর যদি তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে থাকে তাহলে তুমি বলে দাও : আমার কর্মফল আমি পাব, আর তোমাদের কর্মফল তোমরা পাবে। তোমরা তো আমার কৃতকর্মের জন্য দায়ী নও, আর আমিও তোমাদের কর্মের জন্য দায়ী নই। (সূরা ইবরাহীম, ১০ : ৪১) আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আরো বলেন :
لَنَا أَعْمَلُنَا وَلَكُمْ أَعْمَلُكُمْ
আমাদের কাজ আমাদের এবং তোমাদের কাজ তোমাদের। (সূরা শুরা, ৪২ ঃ ১৫, ২৮ ঃ ৫৫) অর্থাৎ আমাদের কর্মের জন্য তোমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবেনা এবং তোমাদের কর্মের জন্য আমাদেরকেও জবাবদিহি করতে হবেনা ।
সহীহ বুখারীতে এ আয়াতের তাফসীরে লিখা হয়েছে : তোমাদের জন্য তোমাদের দীন অর্থাৎ কুফর, আর আমার জন্য আমার দীন অর্থাৎ ইসলাম । (ফাতহুল বারী ৮/৬০৪ )
সূরা কাফিরুন এর তাফসীর সমাপ্ত