কুরবানির সত্য ইতিহাস
মুসলিম জাতির
পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একদা স্বপ্ন দেখলেন কেউ তাকে আল্লাহর রাস্তায়
কুরবানি করার জন্য বলছেন। হাদীস শরীফে বলা আছে ,নবিদের প্রতি স্বপ্নাদেশ ওহীর সমতূল্য।স্বপ্নে
কুরবানীর আদেশ পেয়ে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্থির হয়ে উঠলেন। এরপর সে অনেক
চিন্তায় পড়ে গেলেন। তারপর সে অনেক চিন্তা ভাবনা করে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওতা’য়ালার রাস্তায় অনেক উট , দুম্বা কুরবানি করে দিলেন। পরদির
রাতে সে অর্থাৎ হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার স্বপ্ন দেখলেন কেউ তাকে আল্লাহর
রাস্তায় কুরবানি করার জন্য বলছেন।তিনি এবার ও দু’শ উট কুরবানি করলেন। তৃতীয় দিনে ও
সে একই স্বপ্ন দেখলেন এবং সে আবার ও আল্লাহর রাস্তায় দু’শ উট কুরবানি করলেন। এরপর চতুর্থ্
রাতে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্ন দেখলেন আল্লাহ সোবহানাহু ওতা’আলার রাস্তায়
তার সর্বোচ্চ প্রিয় বস্তুটি আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি দেবার জন্য সেই এই স্বপ্ন দেখে
হতভম্ব হয়ে গেলেন। হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলেন এবং
সে ভাবতে লাগলেন আমার কাছে আমার সর্বোচ্চ প্রিয় বস্তুটি হলো আমার প্রিয় সন্তান ইসমাঈল।
হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারঁ সন্তান হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুব বেশি ভালবাসতেন। কেননা
আল্লাহ সুবহানাহু ওতা’আলা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ বয়সে আল্লাহ সুবহানাহু
ওতা’আলা হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিবি হযরত হাযেরার গর্ভে পাঠালেন। হযরত বিবি হাযেরা নির্বাসিত ছিলেন। হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে এই প্রত্যাদেশ
পেয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে বিবি হাযেরার নিকট যাবার জন্য রওয়ানা হলো তিনি মক্কায বিবি হাযেরার
নিকট পৌছলেন এবং বিবি হাযেরাকে বললেন তিনি তারঁ পুএ হযরত ইসমাঈলকে নিয়ে মক্কার অদূরে
একটি দাওয়াতে যাবেন । তাই হাযেরা যেন পুত্র ইসমাঈলকে সুন্দর করে আতোর গোলাপ বা সুগন্ধি
লাগিয়ে পরিপাটি করে দেন। বিবি হাযেরা অনেক খুশি হলেন এই ভেবে যে সর্ম্পক বিহীন পিতা
পুত্রের মাঝে একটি সুন্দর সর্ম্পক হতে যাচ্ছে। হযরত বিবি হাযেরা ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
উত্তম রুপে সাজিয়ে দিলেন। হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছিলেন পুটপুটে সুন্দর।
তখন তারঁ
বয়স ছিলেন মাত্র নয় বছর।হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম পু্ত্র ইসমাঈলকে নিয়ে রওনা হলেন। একদিকে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যদিকে ইবলিশ
শায়তান মানুষ রূপে হযরত বিবি হাযেরার নিকট উপস্থিত হলেন। শয়তান বিবি হাযেরাকে প্ররোচনা
দিতে লাগলো যে, ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারঁ প্রাণ প্রিয় পুত্র ইসমাঈলকে নিয়ে কোন
দাওয়াতে যাননি বরং আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য কুরবানির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছেন।বিবি
হাযেরা শয়তানের প্ররোচনায় না পড়ে তার উত্তরে বললেন—যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওতা’আলা কুরবানির
মাধ্যমে হযরত ইসমাঈকে কবুল করে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
শয়তান বিবি হাযেরাকে ধোকা দিতে না পেরে সে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
পৌছল। শয়তান তখন হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্ররোচনা দিতে লাগলো এই বলে যে,
তোমার পিতা তোমাকে কোন দাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছেনা । তোমাকে আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য আল্লাহর
রাস্তায় কুরবানি করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছে। শয়তান আরো বললেন যে তোমার পিতা হযরত ইব্রাহিম
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে গলায় চুরি দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি দিবে। হযরত ইসমাঈল
আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানের প্ররোচনায় না পড়ে শয়তানকে উত্তর দিলেন এই বলে যে, কুরবানির
মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে কবুল করলে তাহলে আমার জীবন ধন্য।
এমতাস্থায় হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন যে, পিছন থেকে কেউ একজন বলতে লাগলেন যে তাকে কুরবানি করার জন্য নেওয়া হচ্ছে। তখন ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জানালেন এগুলো শয়তানের প্ররোচনা ছাড়া আর কিছুই নয়। হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইসমাঈল বললেন যে শয়তানের উদ্দেশ্যে সাত খন্ড পাথর নিক্ষেপ করতে। হযরত ইসমঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানকে সাত খন্ড পাথর নিক্ষেপ করলেন এবং শয়তান দূরীভূত হলো। তাই হযরত ইসমঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত হিসেবে জিলহজ্ব মাসে পবিত্র হজ্ব পালনের সময় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এরপর হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনার এক র্নিজন স্থানে এসে বসলেন এবং স্বপ্ন যুগে পুত্রকে আল্লাহর আদেশে কুরবানি করার কথা বললেন। পিতার মুখে এসব কথা শুনে হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন। এবং হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ভেবে অত্যান্ত আনন্দিত হলেন যে, আল্লাহ তারঁ সৌভাগ্যের দ্বার খুলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাকে কবুল করেছেন। ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারঁ পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন এই কাজের ক্ষেত্রে তাকেঁ ধৈর্যের মধ্যে পাবেন এবং আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য দ্রুত কাজ সম্পাদন করার জন্য বললেন। স্বীয় নিজ সন্তানকে কুরবানি করার কথা ভেবে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামের মন বিচলিত হয়ে উঠলো।সেই মুহূর্তে হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারঁ পিতা ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শক্তি যুগালেন এই বলে যে, আপনি আমার হাত পা বেধেঁ দিন এবং আমাকে বিপরীত দিকে কাত করে শুয়ে দিন যেন সরাসরি আমার মুখমন্ডল দেখতে না পান। তারপর আমার গলায় চুরি চালনা করুন। এভাবে আপনি অবশ্যই কৃতর্কায হলেন। হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো অনুরোধ করলেন এই বলে যে, কুরবানি করার পর তার রক্ত ভেজা জামা যেন তার মা বিবি হাযেরাকে দেন যাতে তিনি এইগুলো দেখে আল্লাহর আদেশের উপর খুশি থাকেন এবং এগুলো দেখে সন্তানের কথা মনে করে স্বস্থি লাভ করে। কারণ তারঁ আর কোন সন্তান নেই। হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারঁ পুত্র ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা মতো তাকে বাধঁলেন এবং তার গলায় চুরি চালালেন।
কিন্তু আল্লাহর আদেশে চুরি হযরত ইসমাঈল
আলাইহি ওয়াসাল্লামের গলায় একটু ক্ষত পযর্ন্ত সৃষ্টি করতে পারলোনা এরপর হযরত ইসমাঈল
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারঁ পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন সন্তানের মুখের
দিকে তাকিয়ে জবেহ করা খুবই কঠিন কাজ হয়ত আল্লাহ
এই কাজ পছন্দ করছেননা । অতএব হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন নিজ চুখে
কাপড় বেধেঁ নেয় যাতে করে সে ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পাবেন না। হযরত ইব্রাহিম
আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্রের কথা মতো তারঁ চুখ বেধেঁ নিলেন এবং আল্লাহু আকবার বলে তারঁ
পুত্রের গলায় চুরি চালালেন। আল্লাহ সুবহানাহু
ওতা’আয়া হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরীক্ষায় খুশি হলেন এবং হযরত জিব্রাঈল আলাইহি
ওয়াসাল্লামের মারপতে বেহেশত থেকে আনা এক দুম্বাকে হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামের
জায়গায় রেখে দেয়। হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটু দূরত্বে দাড় করিয়ে রাখলেন।
হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবেহের কাজ সুসম্পন্ন হয়েছে ভেবে চুখের কাপড় খুলে
পেললেন। তখন তিনি যা দেখলেন তা বিশ্বাস হলো
না । তিনি দেখলেন হযরত ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামের জায়গায় একটি দুম্বা জবেহ হয়ে পড়ে
রইলো আর কিছু দূরে ইসমাঈল দাড়িয়ে আছে । এই দৃশ্য দেখে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম
চুখ মুছে চারদিকে তাকালেন। এই বাস্তব দৃশ্য দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। হযরত
ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নির্বাক হয়ে পিতার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ক্ষণিক পরে পিতা
পুত্রকে জড়িয়ে ধরলেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন এবং পিতা পুত্র একত্র হয়ে শুকরানার
নামায আদায করার জন্য দাড়িয়ে গেলেন । সেই মুহূর্তে আল্লাহর পয়গাম্বার হযরত জিব্রাইল
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হলেন এবং ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন – হে আল্লাহর
বন্ধু ! আল্লাহ আপনাকে সালাম প্রেরণ করেছেন এবং আল্লাহ আরো বলেছেন হে ইব্রাহিম! আল্লাহর
উদ্দেশ্যকে তুমি বাস্তবে রূপ দান করেছো্ নিঃসন্দেহে ইহা ছিল একটি মহা পরীক্ষা । আমি
এভাবে আমার সৎ ও উদার বান্দাদের পুরষ্কৃত করে থাকি। আমি সন্তান কুরবানির ক্ষেত্রে বদল করে পশু কুরবানি
করে পুরস্কিৃত করেছি। আরো যা দেবার তা পরকালের জন্য রইল । আমি আমার সৎ নিষ্টাবান বান্দাদের এভাবে পুরষ্কৃত
করে থাকি।ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঈমানদার কৃত জাত বান্দাদের মধ্যে অন্যতম।
তাকে ইসহাক নামক আরো এক পুত্রের সন্ধান দিচ্ছি। তিনি নবি হিসেবে সৎ বান্দাদের অর্ন্তভুক্ত
থাকবে।এই প্রেরিত সংবাদ গুলো শুনে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত খুশি হলেন।অতঃপর
ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে তিনি বিবি হাযেরার নিকট গেলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে
বললেন। বিবি হাযেরা সমস্ত ঘটনা শুনার পর আল্লাহর শুকর আদায় করলেন। আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনেক গুলো পরীক্ষা করেছেন কুরবানীর পরীক্ষাটি ও তার মধ্যে একটি।
আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামের
মতো আমাদের সবার কুরবানীকে কবুল করুন । আমিন আমিন আমিন……