Issues of Qurbani - কুরবানীর মাসআলা সমূহ

Muhammad Jamal Uddin
0

 

Issues of Qurbani - কুরবানীর মাসআলা সমূহ


কুরবানীর মাসআলা সমূহঃ

কোরবানী একটি আর্থিক এবাদত। এটা সম্পদশালীর উপর ওয়াজিব। নির্দিষ্ট শশু নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহর ওয়াস্তে সাওয়াবের নিয়্যতে যবেহ করাই হচ্ছে ক্বোরবানী। মুসলমান, মুক্বীম, নেসাবের অধিকারী, আযাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব।

মাসআলাঃ যেমন পুরুষের উপর ক্বোরবানী ওয়াজিব, তেমনি মহিলার উপরও

ওয়াজিব।(দুরুল মুখতার ও অন্যান্য কিতাবা)

মাসআলাঃ মুসাফিরের উপর কোরবানী ওয়াজিব নয়; কিন্তু নফল হিসেবে করতে
চাইলে করতে পারে, সাওয়াব পারে।(দুরুল মুখতার ও অন্যান্য কিতাব)
মাসআলাঃ নেসাবের  অধিকারী হওয়া।

 নেসাবের  অধিকারী হওয়া বলতে ততটুকু সম্পদ হওয়া বুঝায়, যতটুকু সম্পদ হলে সাদক্বা-ই ফিতর ওয়াজিব হয়। অর্থাৎ মূল ব্যবহারিক সামগ্রী ব্যতীত দু’শত দিরহামের (সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ) মালিক হওয়া।( দুরুল মুখতার, আলমগীরী ও অন্যান্য কিতাব।)

মাসআলাঃ যে ব্যক্তি দু'শ' দিরহাম বা বিশ দিনারের মালিক বা মূল ব্যবহারিক সামগ্রী ব্যতীত এমন কোন জিনিসের মালিক হয় যার মূল্য দু'শত দিরহাম, তাহলে সে ধনী হিসেবে বিবেচিত হবে তার উপর ক্বোরবানী ওয়াজিব। তবে এ নেসাবের উপর এক বছর অতিবাহিত করার প্রয়োজন নেই। 
দিনে এ মালিক হওয়া যথেষ্ট।

ক্বোরবানীর সময়
১০ যিলহজ্বের সুবহে সাদিক থেকে ১২ তারিখের সূর্যাস্ত পর্যন্ত অর্থাৎ তিন দিন দু'রাত ক্বোরবানীর সময়। তবে দশ তারিখ সবচেয়ে উত্তম। অপরাগতায় এর র এগার তারিখ, তারপর বার তারিখেও কোরবানী করা যাবে।

মাসআলাঃ শহরের ঈদের নামাযের পর ক্বোরবানী করা পূর্বশর্ত আর অজগ্রামে যেহেতু ঈদের নামায নেই, সেহেতু সুবহে সাদিক থেকে কোরবানী করতে পারে। মাস্আলাঃ ক্বোরবানীর নির্দিষ্ট সময়ে কোরবানী করা আবশ্যক। তখন পরে ওই পরিমাণ মূল্য বা সেই পরিমাণ মূল্যের পশু সাদক্বা করে দিলে ওয়াজিব আদায় হবে না।(আলমগীরী। )

মাসআলাঃ ক্বোরবানীর দিনগুলো অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানী বাদ পড়ে গেল। এখন আর কোরবানী হবে না। যদি কোন পশু কোরবানীর জন্য ক্রয় হয়ে থাকে, তাহলে সেটা সাদক্বা করে অন্যথায় একটি ছাগলের মূল্য সদকা করে দিবে।[রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী।

মাসআলাঃ যদি কোরবানীর শর্তসমূহ পাওয়া যায় (যা উপরে বর্ণিত হয়েছে) তাহলে প্রত্যেকের উপর ক্বোরবানী করা ওয়াজিব। একটি ছাগল বা ভেড়া কোরবানী একজনের জন্য যথেষ্ট আর একটি উট, গরু বা মহিষের মধ্যে সাতজন শরীক পারে। এক সপ্তমাংশের চেয়ে কম হতে পারে না। সাতজন থেকে যদি কম অংশীদার হয় তবে ক্ষতি নেই; কিন্তু কারো অংশ এক সপ্তামাংশ থেকে কম হলে কোরবানী হবে না।

মাসআলাঃ কোরবানীতে সকল অংশীদারের নিয়্যত সাওয়াব অর্জনের হওয়া চাই। কেবল মাংস খাওয়ার নিয়্যত যেন না হয়। সুতরাং আক্বীক্বাকারীও অংশীদার হতে পারে। কারণ আক্বীকাতেও সাওয়াব অর্জনের নিয়্যত থাকে।(রিদ্দুল মুহতার)

কোরবানীর নিয়ম ঃ
ক্বোরবানীর পশু যবেহ করার আগে পশুকে পানি পান করাবেন। আগে থেকেই ছুরি ধারালো করে নেবেন, তবে পশুর সামনে নয়। পশুকে বাম পাশ করে শোয়াবেন যেন কেবলার দিকে মুখ হয় এবং যবেহকারী স্বীয় ডান পা সেটার রানের উপর রেখে ধারালো ছুরি দ্বারা তাড়াতাড়ি যবেহ করে দেবেন এবং যবেহের আগে দো'আ পড়ে নেবেনঃ

إِنِّي وَجْهَتُ وَجْهِيَ لِلَّذِى فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيفًا وَ مَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ . لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ . اَللّهُمَّ لَكَ وَمِنْكَ بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرُ .

উচ্চারণঃ ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী-ফাত্বারাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বা হানী-ফাঁও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-য়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাব্বিল আলামীন। লা-শরীকা লাহু ওয়া বিষা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা লাকা ওয়া মিনকা বিসমিল্লা-হি আল্লা-হু আকবার।

দো'আ শেষ হবার সাথে ছুরি চালিয়ে দেবেন। কোরবানী নিজের পক্ষ থেকে হলে যবেহ করার সময় এ দো'আটি পড়বেন- اللَّهُمَّ تَقَبَّلُ مِنِى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ خَلِيْلِكَ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَبِيكَ

مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা তাক্বব্বাল মিন্নী-কামা-তাক্বাব্বালতা মিন খালী-লিকা ইবরা-হী-মা আলায় হিস সালা-মু ওয়া হাবী-বিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়াসাল্লাম।


যাবেহের সময় রগ চারটি কেটে দিবেন, যার কমপক্ষে তিনটি কাটা জরুরী। এর থেকে অধিক কাটবেন না যেন চুরি হাড় পর্যন্ত পৌঁছে না যায়, কারণ এটা অনর্থক কষ্ট দেয়া। ঠাণ্ডা হওয়ার পর পা কাটবেন এবং চামড়া ছাড়াবেন। যদি অন্যের পক্ষ থেকে যবেহ করা হয়, তাহলে ৮-এর হলে ১১ (অমুকের পক্ষে থেকে) বলবেন। আর যদি অংশীদারী পশু হয়, যেমন গরু, মহিষ ইত্যাদি, তবে নাম বলে তাদের পক্ষ থেকে অর্থাৎ (তখন ‘অমুকের জায়গায়) সকল অংশীদারের নাম বলবেন। তারপর যথানিয়মে আল্লাহর নামে যবেহ্ করবেন। মাসআলাঃ যদি অন্যের দ্বারা জবেহ করানো হয়, তাহলে নিজেও উপস্থিত থাকা উত্তম।

কোরবানীর গোশত ও চামড়াঃ

যদি অংশদারী পশু হয়, তাহলে মাংস যেন ওজন করে ভাগ করা হয়। আন্দাজ করে যেন বন্টন করা না হয়। কারণ যদি কারো কাছে বেশী যায়, তাহলে সে মাফ করে দিলেও জায়েয হবে না। কারণ সেটা শরীয়তের হক্ব। অতঃপর নিজের ভাগকে পুনরায় তিন ভাগ করে এক ভাগ ফক্বীরদেরকে, একভাগ বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনকে দেবে এবং একভাগ নিজের জন্য রাখবে। যদি পরিবারের লোক সংখ্যা বেশী হয়, তাহলে সম্পূর্ণটুকু ঘরের জন্য রেখে দেয়া যায়, আবার সম্পূর্ণটুকু সদক্বা করে দিতে চাইলেও দেয়া যায়; যদিওবা একভাগ নিজের জন্য রাখা উত্তম।[রদ্দুল মুহতার ও বাহার]

মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানী দেয়া হলে, সেটার মাংসেরও একই হুকুম। অবশ্য মৃত ব্যক্তি যদি ওসীয়ত করে যায় যে, তার পক্ষ থেকে যেন ক্বোরবানী দেয়া তাহলে ওই অবস্থায় যেন তার অংশের সম্পূর্ণ মাংস সদক্বা করে দেয়া হয়। মাস্আলাঃ ঈদুল আযহার দিন কোরবানী দাতা যেন সর্বপ্রথম ক্বোরবানীর মাংসই খায়। এটা মুস্তাহাব। [বাহারুর রায়েকা

মাসআলাঃ কোরবানীর মাংস যেন দেয়া না হয়। চামড়া, ভুঁড়ি, রশি, হাড় ইত্যাদি যেন সাদক্বা করে দেয়া হয়, চামড়া ইচ্ছে করলে নিজের কাজেও লাগানো যায়। যেমন মশক, জায়নামায ও বিছানা ইত্যাদি বানানো যায়; কিন্তু বিক্রি করলে এর মূল্য নিজের কাজে লাগানো যাবে না। তখন এর মূল্য সাদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব। [দুরুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার।

মাসআলাঃ আজকাল প্রায়শঃ চামড়া মাদ্রাসায় দিয়ে দেয়। এটা জায়েয। যদি দেয়ার চামড়া বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে দেয়, তাও জায়েয [আলমগীরী ও বাহারা

মাসআলাঃ কোরবানীর মাংস বা চামড়া কসাই বা যবেহকারীকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না।
অবশ্য আত্নীয় স্বজনদের মতো করে  হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যাবে।তবে যেন পারিশ্রমিকের অর্ন্ত
ভুক্ত করে মনে না করা হয়।

মাসআলাঃ ক্রয় করার পর কোরবানীর আগে পশু বাচ্চা প্রসব করলো, তাহলে সেটাও জবেহ করে দেবে আর যদি বিক্রি করে ফেলা হয়, তাহলে এর মূল্য যেন সাদক্বা করে দেয়া হয়। আর যদি কোরবানীর সময়ের মধ্যে জবেহ করা না হয়, তাহলে জীবিত সাদক্বা করে দেবে।

[আলমগীরী, বাহার|

ফায়দা সমূহ ঃ

আমাদের প্রিয় আক্বা ও মাওলা হযরত আহমদ মুজতাবা মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি সার্বজনীন মেহেরবানী দেখুন। তিনি স্বয়ং তাঁর উম্মতের পক্ষে থেকে কোরবানী করেছেন এবং ওই সময়ও উম্মতের কথা স্মরণ রেখেছেন। তাই এটা বড় সৌভাগ্যের বিষয় হবে, যার পক্ষে সম্ভব, সে যেন হুযূর-ই আকরামের জন্য ক্বোরবানী করে। গরু, উট দ্বারা কোরবানী করলে নফল হিসাবে এবং এক ভাগ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়া অতি উত্তম। শরীকদারী ক্বোরবানীতে শরীকগণ সবাই মিলে এক বা একাধিক অংশ হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম'র পক্ষ থেকে কোরবানী দিতে পারবে।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!