সূরা ইখলাস এর তাফসীর

Muhammad Jamal Uddin
0

 

সূরা ইখলাস এর তাফসীর




সূরা ইখলাসের ফাযীলাত সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস

মুসনাদ আহমাদে উবাই ইবন কা' (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মুশরিকরা নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল : 'হে মুহাম্মাদ! আমাদের সামনে তোমার রবের গুণাবলী বর্ণনা কর।তখন আল্লাহ তা'আলা সূরাটি শেষ পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন।

(
আহমাদ /১৩৩)

” لصَّمَدُ
শব্দের অর্থ হল যিনি সৃষ্ট হননি এবং যাঁর সন্তান সন্ততি নেই কেননা যে সৃষ্ট হয়েছে সে এক সময় মৃত্যুবরণ করবে এবং অন্যেরা তার উত্তরাধিকারী হবে। আর আল্লাহ তা'আলা মৃত্যুবরণ ও করবেন না এবং তাঁর কোন উত্তরাধিকারীও হবেনা। তিনি কারও সন্তান নন এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই। তাঁর সাথে অন্য কার ও তুলনা হতে পারে না । ইমাম তিরমিযী (রহঃ), ইমাম ইব্ জারীর (রহঃ) এবং ইমাম ইব্ আবী হাতিমও (রহঃ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী /২৯৯, ৩০১ মুরসাল, তাবারী ২৪/৬৯১)

সহীহ বুখারীর কিতাবুত তাওহীদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক লোকের নেতৃত্বে একদল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। তাঁরা ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন : 'হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যাঁকে আপনি আমাদের নেতা মনোনীত করেছেন তিনি প্রত্যেক সালাতে কিরআতের শেষে ইখলাস সূরাটি পাঠ করতেন।' রাসূল সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে বললেন : 'সে কেন এরূপ করত তা তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করতো?' তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেন : ‘ সূরায় আল্লাহ রাহমানুর রাহীমের গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে, কারণে সূরা পড়তে আমি খুব ভালবাসি।' কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : “তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালবাসেন।' (ফাতহুল বারী ১৩/৩৬০, মুসলিম /৫৫৭, নাসাঈ /১৭৭)

সহীহ বুখারীর কিতাবুস সালাতে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন আনসারী মাসজিদে কুবার ইমাম ছিলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল যে, তিনি প্রতি রাক'আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরই সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। তারপর কুরআনের অন্য অংশ পছন্দমত পড়তেন। একদিন মুক্তাদী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন : 'আপনি সূরা ইখলাস পাঠ করেন, তারপর অন্য সূরাও এর সাথে মিলিয়ে দেন, কি ব্যাপার? আপনি কি মনে করেন যে, সূরা ইখলাসের সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পাঠ না করলে সালাত শুদ্ধ হবেনা ? হয় শুধু সূরা ইখলাস পড়ুন অথবা এটা ছেড়ে দিয়ে অন্য সূরা পাঠ করুন।' আনসারী জবাব দিলেন : ‘আমি যেমন করছি তেমনি করব, তোমাদের পছন্দ না হলে বল, আমি তোমাদের ইমামতি ছেড়ে দিচ্ছি।' মুসল্লীরা দেখলেন যে, এটা মুশকিলের ব্যাপার! কারণ উপস্থিত সকলের মধ্যে তিনিই ছিলেন ইমামতির সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। তাই তাঁর বিদ্যমানতায় তাঁরা অন্য কারও ইমামতি মেনে নিতে পারলেননা (সুতরাং তিনিই ইমাম থেকে গেলেন) একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে গমন করলে মুসল্লীরা তাঁর কাছে ঘটনা ব্যক্ত করলেন। তিনি তখন ইমামকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন : 'তুমি মুসল্লীদের কথা মাননা কেন? প্রত্যেক রাক'আতে সূরা ইখলাস পড় কেন?' ইমাম সাহেব উত্তরে বললেন : 'হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সূরার প্রতি আমার বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে।' তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন : ‘ সূরার প্রতি তোমার আসক্তি ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে পৌঁছে দিয়েছে।' (ফাতহুল বারী /২৯৮)

সূরা ইখলাসের মর্যাদা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান
সূরা ইখলাস এর তাফসীর



সহীহ বুখারীতে আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক অন্য একটি লোককে রাতে বারবার সূরাটি (সূরা ইখলাস) পড়তে শুনে সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। লোকটি সম্ভবতঃ লোকটির সূরা পাঠকে হালকা সাওয়াবের কাজ মনে করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন : “যে সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।' (ফাতহুল বারী /৬৭৬, আবূ দাউদ /১৫২, নাসাঈ /১৬)

সহীহ বুখারীতে আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন : ‘তোমরা কেহ কি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে পারবে?' সাহাবীগণের কাছে এটা খুবই কষ্ট সাধ্য মনে হল। তাই তাঁরা বললেন : “হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার ক্ষমতা আছে?' তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে বললেন : “জেনে রেখ যে, সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।' (ফাতহুল বারী /৬৭৬)

ইমাম মালিক ইব্ আনাস (রহঃ), উবাইদ ইব্ হুনাইন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবূ হুরাইরাহকে (রাঃ) বলতে শুনেছেন : একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বের হই এবং তিনি পথে এক ব্যক্তিকে সূরাটি পাঠ করতে শোনেন তখন তিনি বললেন : ওয়াজিব হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম : কি ওয়াজিব হয়েছে? তিনি বললেন : জান্নাত। (মুয়াত্তা মালিক /২০৮, তিরমিযী /২০৯, নাসাঈ /১৭৭) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) একে হাসান সহীহ, গারীব বলেছেন। আমরা ইতোপূর্বে বর্ণনা করেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : এর প্রতি (সূরা ইখলাস) তোমার ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। (ফাতহুল বারী /২৯৮)


আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে কেহ কি রাতে সূরাটি তিনবার পড়ার ক্ষমতা রাখেনা? সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতূল্য।' হাদীসটি হাসিম আবূ ইয়ালা মুসিলী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। এর সনদ দুর্বল।

আবদুল্লাহ ইব্ ইমাম আহমাদ (রহঃ) মুয়ায ইবন আবদুল্লাহ ইব্ খুবাইব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বলেছেন : আমরা খুব পিপাসার্ত ছিলাম এবং অন্ধকার ঘনিয়ে আসছিল বলে সালাত আদায় করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং আমার হাত দু'টি তাঁর হাতে নিয়ে বললেন : পড়। এরপর তিনি নীরব থাকলেন। অতঃপর তিনি আবার বললেন : পড়। আমি বললাম কি পড়ব? তিনি বললেন : ‘প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় তিনবার সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক সূরা নাস পড়বে। প্রতিদিন তোমার জন্য দুই বারই যথেষ্ট।' (আহমাদ /৩১২, আবূ দাউদ /৩২০, তিরমিযী ১০/২৮, নাসাঈ /২৫০) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান সহীহ গারীব বলেছেন। ইমাম নাসাঈ (রহঃ) অন্য একটি সূত্রেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাতে এতটুকু অতিরিক্ত রয়েছে : তিনটি সূরা পাঠ করলে তোমার জন্য তা যথেষ্ট হবে। (নাসাঈ /২৫১)

সুনান নাসাঈতে এই সূরার তাফসীরে আবদুল্লাহ ইব্ বুরাইদাহ (রহঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মাসজিদে প্রবেশ কালে দেখেন যে, একটি লোক সালাত আদায় করছে এবং নিম্নলিখিত দু' করছে :

اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْتَلُكَ بِانّى اَشْهَدُ اَنْ لا إِلَهَ إِلا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الذي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সাক্ষ্যসহ আবেদন করছি যে, আপনি ছাড়া কোন মাবূদ নেই, আপনি এক অদ্বিতীয়, আপনি কারও মুখাপেক্ষী নন, আপনি এমন সত্ত্বা যাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন এবং যাঁর সমতুল্য কেহ নেই।তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু



আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : “যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে সেই সত্ত্বার শপথ! ব্যক্তি ইসমে আযমের সাথে দু' করেছে। আল্লাহর এই মহান নামের সাথে তাঁর কাছে কিছু যাঞ্চা করলে তিনি তা দান করেন এবং এই নামের সাথে দু' করলে তিনি তা কবূল করে থাকেন।” (আবূ দাউদ ১৪৯৩, তিরমিযী ৩৪৭৫, ইব্ মাজাহ ৩৮৫৭, নাসাঈ /৯০) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন।

সহীহ বুখারীতে আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে যখন বিছানায় যেতেন তখন সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক সূরা নাস - তিনটি সূরা পাঠ করে উভয় হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে সমস্ত শরীরে যত দূর পর্যন্ত হাত পৌঁছানো যায় ততদূর পর্যন্ত হাতের ছোঁয়া দিতেন। প্রথমে মাথায়, তারপর মুখে, এবং এরপর দেহের সামনের অংশে তিনবার এভাবে হাতের ছোঁয়া দিতেন। (ফাতহুল বারী /৬৭৯, আবূ দাউদ /৩২৩, তিরমিযী /৩৪৭, নাসাঈ /১৯৭, ইব্ মাজাহ /১২৭৫)

পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)

(
) বল তিনিই আল্লাহ,

একক/অদ্বিতীয়।

(
) আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।

(
) তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন,

(
) এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

١. قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدُ

٢. اللهُ الصَّمَدُ

٣. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

first d

সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ (শানে নুযূল) পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। ইকরিমাহ (রহঃ) বলেন যে, ইয়াহুদীরা বলত : ‘আমরা আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ) উযায়েরের (আঃ) উপাসনা করি।' আর খৃষ্টানরা বলত : ‘আমরা আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ) ঈসার (আঃ) পূজা করি।' মাজুসীরা


বলত : ‘আমরা চন্দ্র সূর্যের উপাসনা করি।' আবার মুশরিকরা বলত : ‘আমরা মূর্তি পূজা করি।' আল্লাহ তা'আলা তখন এই সূরা অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন  (হে নাবী!) বল আমাদের রাব্ব আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। তাঁর মত আর কেহই নেই। তাঁর কোন উপদেষ্টা অথবা উযীর নেই। তাঁর সমান কেহ নেই যার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। তিনি একমাত্র ইলাহ্ বা মাবূদ হওয়ার যোগ্য। নিজের গুণ বিশিষ্ট হিকমাত সমৃদ্ধ কাজের মধ্যে তিনি একক বে-নযীর। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন, তিনি সামাদ অর্থাৎ অমুখাপেক্ষী। সমস্ত মাখলুক, সমগ্র বিশ্বজাহান তাঁর মুখাপেক্ষী।

ইকরিমাহ (রহঃ) ইব্ আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, ‘সামাদ' তাঁকেই বলে যাঁর কাছে সৃষ্টির সকল কিছুর চাওয়া পাওয়া নির্ভর করে এবং যিনি একমাত্র অনুরোধ পাবার যোগ্য। আলী ইব্ আবী তালহা (রহঃ) ইব্ আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, ‘সামাদহল সত্ত্বা যিনি নিজের নেতৃত্বে, নিজের মর্যাদায়, বৈশিষ্ট্যে, নিজের বুযগীতে, শ্রেষ্ঠত্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের হিকমাতে, বুদ্ধিমত্তায় সবারই চেয়ে অগ্রগণ্য। এই সব গুণ শুধুমাত্র আল্লাহ জাল্লা শানুহুর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। তাঁর সমতুল্য সমকক্ষ আর কেহ নেই। তিনি পুতঃ পবিত্র মহান সত্ত্বা। তিনি এক অদ্বিতীয় তিনি সবারই উপর বিজয়ী, তিনি বেনিয়ায।সামাদ' এর একটা অর্থ এও করা হয়েছে যে, 'সামাদ' হলেন তিনি যিনি সমস্ত মাখলুক ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও অবশিষ্ট থাকেন। যিনি চিরন্তন চিরবিদ্যমান। যাঁর লয় ক্ষয় নেই এবং যিনি সব কিছু হিফাযাতকারী, যাঁর সত্ত্বা অবিনশ্বর এবং অক্ষয়। আল আমাশ (রহঃ) শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যেসামাদহলেন সত্ত্বা যিনি পৃথিবীর সবকিছু নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখেন, কেহ তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। (তাবারী ২৪/৬৯২)

আল্লাহ তা'আলা সন্তান-সন্ততি হতে পবিত্র



এরপর ইরশাদ হচ্ছে অরণ্যে অনন্য নতুন আল্লাহর সন্তান সন্ততি নেই, পিতা মাতা নেই, স্ত্রী নেই। যেমন কুরআনুল হাকীমের অন্যত্র রয়েছে :


بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ أَنَّى يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَمْ تَكُن صَحِبَةٌ وَخَلَقَ كُلِّ شَيْءٍ

তিনি আসমান যমীনের স্রষ্টা; তাঁর সন্তান হবে কি করে? অথচ তাঁর জীবন সঙ্গিনীই কেহ নেই। তিনিই প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন (সূরা আন'আম, : ১০১) অর্থাৎ তিনি সব কিছুর স্রষ্টা মালিক, এমতাবস্থায় তাঁর সৃষ্টি মালিকানায় সমকক্ষতার দাবীদার কে হতে পারে? অর্থাৎ তিনি উপরোক্ত সমস্ত দোষ-ত্রুটি/কলঙ্ক থেকে মুক্ত পবিত্র। যেমন কুরআনের অন্যত্র রয়েছে :

وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا، لَقَدْ جِعْتُمْ شَيْئًا إِذَا تَكَادُ السَّمَوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُ الْأَرْضُ وَتَخِرُ الْجِبَالُ هَذَا أَن دَعَوْاْ لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا. وَمَا يَنبَغِي لِلرَّحْمَنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا. إن كُلُّ مَن فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ إِلَّا ءَاتِي الرَّحْمَنِ عَبْدًا لَقَدْ أَحْصَنَهُمْ وَعَدَّهُمْ وَكُلُّهُمْ عَدًّا ءَاتِيهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَرْدًا

তারা বলেন দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। তোমরা তো এক বীভৎস কথার অবতারণা করেছ। এতে যেন আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড বিখন্ড হবে এবং পর্বতসমূহ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের উপর সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভন নয়। আকাশসমূহ পৃথিবীতে এমন কেহ নেই যে দয়াময়ের নিকট উপস্থিত হবেনা বান্দা রূপে। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করেছেন এবং কিয়ামাত দিবসে তারা সকলেই তাঁর নিকট আসবে একাকী অবস্থায়। (সূরা মারইয়াম, ১৯ : ৮৮-৯৫) আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন :  وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَنَهُ ۚ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ لَا

يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ، يَعْمَلُونَ


তারা বলে দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা তাঁর আগে বেড়ে কথা বলেনা; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। (সূরা আম্বিয়া, ২১ ২৬- ২৭) আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেন :

وَجَعَلُوا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجَنَّةِ نَسَبًا وَلَقَدْ عَلِمَتِ الْجَنَّةُ إِنَّهُمْ لَمُحْضَرُونَ.

سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ

আল্লাহ জিন জাতির মধ্যে তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থির করেছে; অথচ জিনেরা জানে যে, তাদেরকেও উপস্থিত করা হবে শাস্তির জন্য তারা যা বলে তা হতে আল্লাহ পবিত্র, মহান। (সূরা সাফফাত, ৩৭: ১৫৮-১৫৯) বুখারীতে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কষ্টদায়ক কথা শুনে এত বেশী ধৈর্য ধারণকারী আল্লাহ ছাড়া আর কেহ নেই। মানুষ বলে যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে, তবুও তিনি তাকে অন্ন দান করছেন, স্বাস্থ্য সুস্থতা দান করছেন। (ফাতহুল বারী ১৩/৩৭২) সহীহ বুখারীতে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : 'আল্লাহ তা'আলা বলেন : ‘আদম সন্তান আমাকে অবিশ্বাস করে, অথচ এটা তার জন্য সমীচীন নয়। সে আমাকে গালি দেয়, অথচ এটাও তার জন্য সমীচীন সঙ্গত নয়। সে আমাকে অবিশ্বাস করে বলে যে, আমি নাকি প্রথমে তাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছি পরে আবার সেভাবে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবনা। অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করাতো প্রথমবার সৃষ্টি করা থেকে সহজ।' আরসে আমাকে গালি দেয়' এর অর্থ হচ্ছে এই যে, সে বলে আমার নাকি সন্তান রয়েছে, অথচ আমি একক, আমি অভাবমুক্ত অমুখাপেক্ষী। আমার কোন সন্তান নেই, আমার পিতা-মাতা এবং আমার সমতুল্যও কেহ নেই।' (ফাতহুল বারী /৬১১, ৬১২)

সূরা ইখলাস এর তাফসীর সমাপ্ত।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!